বরেণ্য লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ সোমবার যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আনা হবে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিমের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে সংবাদ সংস্থা ইউএনবি।
একুশের গানের রচয়িতা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে গভীর শোক জানানো হয়েছে জানিয়ে সাঈদা মুনা তাসনিম বলেন, ‘তার মরদেহ বারনেট হাসপাতালে রাখা হয়েছে, যেখানে বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।
‘যুক্তরাজ্য থেকে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে করে আগামী সপ্তাহে তার মরদেহ ঢাকায় পাঠানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুক্রবার বাদ জুমা লন্ডনের উকলেন্ড মসজিদে তার জানাজা আয়োজনের চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে শহীদ আলতাব আলী পার্ক শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
হাইকমিশনার বলেন, গাফ্ফার চৌধুরীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে তার স্ত্রীর কবরের পাশে শায়িত করা হবে।
লন্ডনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মারা যান। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং বিশিষ্টজনও শোক প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শোক ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী উলানিয়া জুনিয়র মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে।
১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮ সালে বিএ অনার্স পাস করেন।
বরিশাল শহরে কিছুদিন মার্কসবাদী দল আরএসপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী। ছাত্রজীবনেই তার সাহিত্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে ‘সওগাত’ পত্রিকায় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রথম গল্প ছাপা হয়।
১৯৫০ সালে গাফ্ফার চৌধুরীর কর্মজীবন শুরু হয়। এর পর থেকে তিনি ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
পরবর্তী সময়ে ‘সংবাদ’, ‘সওগাত’, ‘মেঘনা’, ‘চাবুক’, ‘আজাদ’, ‘জনপদ’, ‘বাংলার ডাক’, ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’, ‘নতুন দেশ’, ‘পূর্বদেশ’সহ অনেক পত্রিকায় কাজ করেন।
বাংলাদেশ ছেড়ে প্রবাসে বসেও গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোয় নিয়মিত লিখেছেন। তার লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোর’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’ ও ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেসকো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, সংহতি আজীবন সম্মাননা পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।