রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে এক তরুণী। সঙ্গে দুই যুবক। মেয়েটির পরনে জিনস ও স্লিভলেস টপস।
এসব পোশাক অশালীন ও এ ধরনের পোশাক পরে স্টেশনে আসা অনুচিত বলে মেয়েটিকে জানায় পাশের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তি। তার এ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান তরুণীর সঙ্গে থাকা যুবকদের একজন। এ নিয়ে শুরু হয় তর্কাতর্কি। একপর্যায়ে মেয়েটিকে মারতে তেড়ে আসেন এক নারী।
এ ঘটনা দেখা গেছে ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওতে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ভাইরাল হয় ভিডিওটি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে বুধবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে।
বৃহস্পতিবার স্টেশনে গিয়ে কথা হয় দুই দোকানদার মো. আমিনুল ও ইখলাস উদ্দিনের সঙ্গে। পুরো ঘটনা তারা দেখেছেন বলে জানান।
ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে
আমিনুল ও ইখলাস নিউজবাংলাকে জানান, ভোরে ঢাকামুখী ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই দুই যুবক ও সেই তরুণী। হঠাৎ পাশ দিয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধ মেয়েটিকে দেখে বলে ওঠেন, ‘আপনার বাড়ি কই? কাল রাতেও এখানে আসছেন। আজকেও আসছেন। এসব পোশাক পড়ে কেউ স্টেশনে আসে নাকি?’
মেয়েটির সঙ্গে থাকা হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা তরুণ ওই বৃদ্ধকে তখন বলেন, ‘আপনি এসব কেন জিজ্ঞেস করছেন? আপনি এভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না। ’
এ নিয়ে বৃদ্ধের সঙ্গে ওই যুবকের বাগ্বিতণ্ডার মধ্যে আরেক নারী এসে মেয়েটির পোশাক নিয়ে কটাক্ষ ও গালমন্দ করতে থাকেন।
ততক্ষণে চারপাশে কিছু লোক জড়ো হয়ে যায়। ওই বৃদ্ধ ও নারীর সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ হয়ে ওই তরুণী ও যুবককে গালমন্দ করতে থাকেন। ওই যুবকও তাদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। একপর্যায়ে আরেক ব্যক্তি যুবককে ধাক্কা দেন। মেয়েটি তখন যুবককে নিয়ে সরে যেতে চেষ্টা করলে ওই নারী মেয়েটিকে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন।
মেয়েটি ও সঙ্গে থাকা দুই যুবক সরে গিয়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন।
প্রত্যক্ষদর্শী দুই দোকানদার আরও জানান, তখনই ঢাকাগামী চট্টগ্রাম মেইল ট্রেন চলে আসায় ওই তিনজন তাতে উঠে চলে যায়। সব মিলিয়ে পুরো ঘটনা মিনিট দশেকের।
স্টেশন মাস্টার এটিএম মূছা মিয়া জানান, ঘটনার সময় তিনি ছিলেন না। পরে গিয়ে শুনেছেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়েটা ঢাকার। নাম-ঠিকানা জানা যায় নাই। অশ্লীল পোশাক পরে নাকি দুই দিন এ স্টেশনে এসেছে। তা এখানের লোকজনের নজরে আসে।
‘গতকাল বুধবার সকালে কোনো এক স্থানে রাত্রিযাপন করে ঢাকা যাওয়ার পথে এই স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। তাকে নিয়ে অনেকে বিভিন্ন মন্তব্য করেছে। আমি কোনো সঠিক তথ্য পাইনি। অল্প সময়ের মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। তখন কেউ ভিডিও করে ভাইরাল করেছেন।’
ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন না রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক ইমায়েদুল জাহেদী।
তিনি বলেন, ‘আমি তখন ছিলাম না। হট্টগোলের খবর পেয়ে সেখানে যখন যাই। তখন আর কাউকে পাই নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভিডিও ফুটেজে দেখেছি সহকারী স্টেশন মাস্টার নাঈমুর রহমান ওই তরুণ-তরুণীদের আশ্রয় দিয়েছেন। তার কাছ থেকে জানতে পারি, মেয়েটি বা ছেলেটি কোনো অভিযোগ করেনি। তারা ট্রেন আসার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায়।
‘ফুটেজগুলো আমরা রেখেছি। স্থানীয়ভাবে ওই বৃদ্ধ বা হেনস্তাকারী নারীকে কেউ চিনতে পারেনি, তবে কেউ অভিযোগ করলে আমরা জোরালোভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং প্রত্যেককেই শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।’
হেনস্তার শিকার ওই তরুণী ও তার সঙ্গে থাকা যুবকদের পরিচয় জানা যায়নি বলে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তবে ওই তরুণী, তার সঙ্গী বা তাদের পরিচিত কেউ ঘটনাটি নিয়ে মন্তব্য জানাতে বা কোনো তথ্য দিতে চাইলে +৮৮ ০৯৬০২১১১৮৭৪ নম্বরে কল দিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।