কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনের সময় স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের মোবাইল ফোন এক ইমাম চুরি করেছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। চুরির অভিযোগে সেই ইমামকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ইমামের নাম আজিজ মোহাম্মদ। তিনি একসময় প্রবাসে মসজিদে ইমামতি করতেন।
পুলিশ জানায়, বিদেশে থাকাকালীন গাড়ি চুরির মামলায় তিন বছর সাজা খেটেছেন তিনি। দেশে এসে মাদ্রাসায় চাকরি করতে গিয়ে মোবাইল চুরি করে সেই চাকরিও হারান। পরে মাদকাসক্ত হয়ে মোবাইল চুরির সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
আজিজের সঙ্গে মোবাইল চোর চক্রের আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন রনি হাওলাদার ও মো. জাকির হোসেন।
গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. মশিউর রহমান জানান, গত ২৩ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ারের অফিসে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি সংক্রান্ত প্রেস কনফারেন্সের সময় দুটি মোবাইল ফোন, একটি ওয়ালেটের ভেতর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং নগদ ৪৫ হাজার টাকা চুরি হয়। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করতে থাকে।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার চোরাই মোবাইলসহ আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মশিউর রহমান বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে আজিজ স্বীকার করেছেন, তিনি সংবাদ সম্মেলন চলাকালে স্টেশন ম্যানেজারের ফোন এবং ওয়ালেট চুরি করে পালিয়ে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজিজ একজন কোরআনে হাফেজ। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৌদি আরবে ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গাড়িচালকের কাজও করতেন তিনি। ড্রাইভিং করতে গিয়ে তার গাড়ি চুরির নেশা হয়। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি গাড়িও চুরি করতেন তিনি। ২০১৫ সালে গাড়ি চুরির মামলায় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আজিজ। গাড়ি চুরির মামলায় তিন বছর সাজা হয় তার।
‘সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে এসে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নেন তিনি। সেখানে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন পরে মাদ্রাসায় মোবাইল চুরি করে ধরা পড়লে চাকরি চলে যায় তার। এর পর থেকে আজিজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। ঢাকা শহরে এসে বিভিন্ন মেসে থেকে মোবাইল চুরি শুরু করেন।’
তিন বছর ধরে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানমন্ডি লেক, যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০টি করে মোবাইল চুরি করতেন আজিজ। এরপর চোরাই মোবাইলগুলো গ্রেপ্তার রনি ও জাকিরের কাছে বিক্রি করতেন বলে জানায় পুলিশ।
আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর কমলাপুর স্টেশন থানায় মামলা আছে বলেও জানান এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।