পদ্মা সেতু দেখে বিএনপির গায়ে জ্বালা হচ্ছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, এই সেতুর কারণে আওয়ামী লীগবিরোধীদের মন খারাপ।
জুন মাসে দেশের সবচেয়ে বড় এই সেতুতে যান চলাচল শুরু হবে, সেটি আবারও জানান সেতুমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধান অতিথি হিসেবে। এ সময় তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই বিএনপি এই প্রকল্প নিয়ে সরকারকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছে। বিএনপি সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ তোলার পর সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিল।
কানাডার আদালত বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে ‘গালগপ্প’ বলে উড়িয়ে দেয়ার পরও বিএনপি সরকারের সমালোচনা করেছে। দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এমনও বলেছেন, সরকার জোড়াতালি দিয়ে যে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, সেটি ভেঙে পড়বে এবং সেই সেতুতে যেন কেউ না ওঠে।
নানা ঘটনাপ্রবাহে এক যুগ পার হওয়ার পর আগামী মাস থেকে যখন সেতু চালুর অপেক্ষা, সে সময় আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে পাল্টা আক্রমণ করছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পদ্মা সেতু হয়ে গেল, মানুষ খুশি। ফখরুল সাহেবের মন খারাপ। দেশের মানুষ ভালো আছে, ফখরুল সাহেবের মন খারাপ। মানুষ ভালো থাকলে বিএনপির সকলের মন খারাপ হয়ে যায়।’
জুন মাস থেকে পদ্মা সেতুতে গাড়ি চলবে নিশ্চিত করে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগিরই সময় দেবেন। আমরা তার সময়মতো পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ প্রেস কনফারেন্স করে সমগ্র জাতিকে জানিয়ে দেব।’
পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ করছি, শতভাগ সততার সঙ্গে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অবশেষে নিজেরাও স্বীকার করেছে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে গিয়ে তারা ভুল করেছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এদিন পদ্মা সেতু নিয়ে কথা বলেন ঠাকুরগাঁওয়ে। তিনি অভিযোগ করেন, এই সেতু নির্মাণের নামে টাকা লুট হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘১০ হাজার কোটি টাকার সেতু তারা ৩০ হাজার কোটি টাকায় বানিয়েছে।’
কাদের বলেন, ‘প্রমত্তা পদ্মা নদীতে প্রবল খরস্রোতা থাকায় নদীর এপার-ওপার ভাঙাগড়ার খেলায় অনেক কষ্টে এই ভাঙনের মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সফলভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতাদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
এই সেতু নিয়ে স্বচ্ছতার প্রমাণ বিদেশি আদালতে হয়েছে বলেও জানান কাদের। বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে বঙ্গবন্ধু পরিবারকে হেনস্তা করতে চেয়েছিল। তারা দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা করেছিল। আর তাতে প্রমাণ হয়েছে, এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি।’
এই সেতু নির্মাণের পুরো কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে চান সেতুমন্ত্রী। বলেন, ‘শেখ হাসিনা প্রত্যাবর্তন করেছিলেন বলেই নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হয়েছে। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়ন ও অর্জনে বিশ্বের বিস্ময়। দেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে জানিয়ে কাদের বলেন, ‘তা মোকাবিলা করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ের বন্দরে পৌঁছাবে।’
বিআরটি প্রকল্প শেষের দিকে
গাজীপুর থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্বিঘ্নে বাস চলাচলের জন্য নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি প্রকল্পে আর বিলম্ব হবে না বলেও জানান কাদের।
এই প্রকল্পের কারণে গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাজীপুরের মানুষ রাজধানীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।
সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, গাজীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এই পথে যাতায়াতে দুই থেকে পাঁচ ঘণ্টা সময় লাগছে। তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
‘বিআরটির নিচ দিয়ে চলাচলে আর দুর্ভোগ হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা খুব কাছাকাছি এসে গেছি, কাজ সমাপ্তের পথে। আপনারা ৩০ মিনিটে গাজীপুর থেকে ঢাকা চলে আসবেন।’
বিএনপি পচনশীল দল
প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আর কোনো দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন কাদের। বলেন, দলটি এখন ফেসবুকে আন্দোলন করে।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি বর্তমানে পচনশীল একটি দল। তাদের রাজপথের আন্দোলনের কথা শুনতে শুনতে ১৩ বছর পার হলো। বিএনপি আর কোনো দিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। ওরা এখন ফেসবুকে আন্দোলনপ্রিয় দল।’
গাজীপুর আওয়ামী লীগে কোনো কোন্দল দেখতে চান না বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার, ময়েজ উদ্দীনের গাজীপুরে কেন দলীয় কোন্দল? নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
১৯ বছর পর এই সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকে শহরের রাজবাড়ী মাঠে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী জড়ো হন। কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরিসহ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।