প্রবীণ সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত লেখক এবং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ কালজয়ী গানের স্রষ্টা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার কালজয়ী গান ও লেখনীর মাধ্যমে প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে চির অম্লান হয়ে থাকবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বিজ্ঞ ও পুরোধা ব্যক্তিত্বকে হারালাম, যিনি তার লেখা ও গবেষণায় আমাদের বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।’
বিশিষ্ট এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে পৃথক শোকবার্তা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
রাষ্ট্রপতির শোকশোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে বাংলাদেশ প্রগতিশীল, সৃজনশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন অগ্রপথিককে হারাল।’
একুশের অমর সেই গান বাঙালি জাতিকে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তির আন্দোলনে অসীম সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একজন বিশিষ্ট কলামিস্ট। লেখনীর মাধ্যমে তিনি আজীবন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকাশে কাজ করে গেছেন। তার মৃত্যু দেশের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।’
প্রধানমন্ত্রীর শোকপ্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার মেধা-কর্ম ও লেখনীতে এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন।
‘বাঙালির অসাম্প্রদায়িক মননকে ধারণ করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়কে সমর্থন করে জাতির সামনে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।’
স্মৃতিচারণ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে আমার বহু স্মৃতি। অনেক পরামর্শ পেয়েছি। একজন বিজ্ঞ ও পুরোধা ব্যক্তিত্বকে হারালাম, যিনি তার লেখা ও গবেষণায় আমাদের বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশ সরকার নিবন্ধিত সাপ্তাহিক জয় বাংলা পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন বলেও শোকবার্তায় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পরবর্তীতে তিনি প্রবাসে থেকেও তার লেখনীর মাধ্যমে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে তুলে ধরেছেন।’
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
স্পিকারের শোকআবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।
প্রধান বিচারপতির শোকআবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যু হয়।
তার ঘনিষ্ঠজন সাংবাদিক স্বদেশ রায় নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, লন্ডনের নর্থ উইক হাসপাতালে এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন গাফ্ফার চৌধুরী। তার দুটি কিডনিই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ডায়ালাইসিস কাজ করছিল না।
স্বদেশ রায় আরও জানান, বুধবার গোসলের পর গাফ্ফার চৌধুরীর দেহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। সেটি আর নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আজ তার মৃত্যু হয়।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে নিবন্ধিত স্বাধীন বাংলার প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক জয় বাংলা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশালের উলানিয়ার চৌধুরী বাড়িতে তার জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর।
১৯৪৯ সালে ‘সওগাত’ পত্রিকায় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রথম গল্প ছাপা হয়।
১৯৫০ সালে ‘দৈনিক ইনসাফ’ পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন।
পরবর্তীতে ‘সংবাদ’, ‘সওগাত’, ‘মেঘনা’, ‘চাবুক’, ‘আজাদ’, ‘জনপদ’, ‘বাংলার ডাক’, ‘সাপ্তাহিক জাগরণ’, ‘নতুন দেশ’, ‘পূর্বদেশ’সহ অনেক পত্রিকায় কাজ করেন তিনি।
প্রবাসে বসেও গাফ্ফার চৌধুরী বাংলাদেশের প্রধান পত্রিকাগুলোয় নিয়মিত লিখেছেন।
গাফ্ফার চৌধুরীর বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান’, ‘নাম না জানা ভোর’, ‘নীল যমুনা’, ‘শেষ রজনীর চাঁদ’, ‘কৃষ্ণপক্ষ’, ও ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’।
বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, সংহতি আজীবন সম্মাননা পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।