হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ফেরত চেয়ে আবার আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
ইন্টারপোলের ঢাকার ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে বুধবার সংস্থাটির ভারতীয় অংশের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়।
এর আগে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পি কে হালদারের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছিল দুদক। সে সময় হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছিল পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।
আরেক মামলা
৪৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ১২ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছে দুদক।
অন্য আসামিরা হলেন শিব প্রসাদ ব্যানার্জি, পাপিয়া ব্যানার্জি, সিদ্দিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, এম এ হাফিজ, অরুণ কুমার কুণ্ডু, অঞ্জন কুমার রায়, মোস্তাইন বিল্লাহ, উজ্জল কুমার নন্দী, সত্য গোপাল পোদ্দার ও রাসেল শাহরিয়ার।
দুদকের সহকারী পরিচালক রাকিবুল হায়াত বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এর আগে কমিশন মামলাটি অনুমোদন দেয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ৪৪ কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ ও পাচার করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হন।
হালদারকে দেশে আনতে কমিটি
পি কে হালদারকে ভারত থেকে দেশে আনতে বুধবার কমিটি করে দুদক। ওই কমিটিতে রয়েছেন দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও গুলশান আনোয়ার।
কমিটি ভারতে গ্রেপ্তার পি কে হালদারকে দ্রুত দেশে ফেরানোর আইনগত বাধা দূরীকরণে কাজ করবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আপাতত দুই সদস্যের কমিটি করা হলেও প্রয়োজনে সদস্য পাঁচজন পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে দুদক সূত্র।
কী বলছেন মন্ত্রীরা
পি কে হালদারকে দ্রুত দেশে ফেরত আনতে চায় সরকার। মঙ্গলবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘মূল অপরাধ যেহেতু বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, সেহেতু ভারতে বিচারের আগেই পি কে হালদারকে ঢাকা ফেরত চাইবে।
‘আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে তাকে ফিরিয়ে আনা। যে মুহূর্তে তাকে ফিরিয়ে আনা হবে, তখন থেকে তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, সেই অভিযোগের বিচার করে তার পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনা খুব কঠিন, তবে মানি লন্ডারিং আইন যেহেতু বিশ্বের সব জায়গায় কঠোরভাবে মানা হচ্ছে, তাই টাকা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’
একই দিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার দোরাইস্বামী।
তিনি জানান, দুদকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন পি কে হালদার।
গ্রেপ্তার ও রিমান্ড
গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পি কে হালদারসহ ছয়জনকে। এরপরই তিন দিনের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয় তাদের।
গ্রেপ্তারের সময় পি কে হালদারের কাছ থেকে ভারতের নাগরিকত্ব, আধার কার্ডসহ বেশ কিছু নথি জব্দ করে অর্থসংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থা ইডি।
মঙ্গলবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সিবিআই আদালতে পি কে হালদারসহ ছয়জনকে হাজির করা হয়। সেখানে গ্রেপ্তার পাঁচ পুরুষকে ১০ দিন করে রিমান্ডে চাইলে আদালত কিছুটা সময় নিয়ে হেফাজতের নির্দেশ দেয়।