ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে সুনামগঞ্জে নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া যাদুকাটা, মহাসিং, মনু, ধলাই পিয়াইনসহ বিভিন্ন শাখা নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নদীর উপচে পড়া পানিতে বহু রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে কাজ হারিয়ে বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ।
এরই মধ্যে বুধবার বন্যার সতর্কতা জারি করেছে সুনামগঞ্জ পাউবো।
সদরের লালপুর এলাকার বাসিন্দা মাহবুব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঘরের পানি কিছুটা কমছিল, কিন্তু পানি আবারও বাড়ছে। এ রকম চলতে থাকলে ঘর-বাড়ি ছাড়িয়া রাস্তায় নামা লাগবে।’
ইব্রাহিমপুর এলাকার বাসিন্দা নুর উদ্দিন বলেন, ‘ধান কাটিয়া ঘরও তুলতে পারিনি ভালো করে, আবারও বানের জলে ঘরপানি। আমাদের সবসময় এই পানির সাথে বসবাস করা লাগে।’
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাদামচাষী জহুর মিয়া বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো দেখিয়া বাদাম চাষাবাদ করছিলাম, কিন্তু দুইবারের বন্যায় আমার সব বাদাম নষ্ট করি দিসে। ঘরও পানি উঠিয়া অবস্থা খুবই খারাপ।’
২৮ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ
ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জে ২২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের যোগাযোগপথ ও আঙ্গিনা প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে হাঁটু সমান পানি থাকায় ২৮টিতে সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম আব্দুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল থেকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ সদরে ১৮, ছাতকে ১৭২, দোয়ারায় ২৪, তাহিরপুরে পাঁচ এবং শান্তিগঞ্জ উপজেলায় একটিসহ ২২০টির মতো স্কুলে পানি উঠেছে। এর মধ্যে ২৮টিতে হাঁটু সমান পানি থাকায় পাঠদান করা যাচ্ছে না।’
বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জরুরি ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছে প্রশাসন। ইতিমধ্যেই প্লাবিত এলাকাগুলোতে তা দ্রুত পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা, ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং ২৫ টন চাল পাঠানো হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হচ্ছে, সব উপজেলায় আমরা ত্রাণসামগ্রী পাঠাচ্ছি।’
কত সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও সে সংখ্যা হিসেব করা হয়নি। তবে আনুমানিক সাত থেকে আট হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সকল নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়েই বইছে। বুধবার কিছুটা কমেছিল, আবারও বাড়তেছে। এভাবে বৃষ্টি থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।’
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হাওরে মানুষের যেন কোনও কষ্ট না হয়, প্রশাসন সেদিকে নজর রাখছে। ইতিমধ্যে শুকনো খাবার, নগদ টাকা, চাল বিতরণ করা হয়েছে।’