বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩ মাসেই সেতু ভাঙার দুঃখ ৩ বছরেও ভোলেনি গ্রামবাসী

  •    
  • ১৯ মে, ২০২২ ০৮:২৬

শিক্ষার্থী নুসরাত, হামিদা আর জান্নাতীরা বলে, ‘ঈদের আগের দিন ব্রিজটি ভেঙে গিয়েছিল। আমরা অনেক আশা নিয়ে এই সেতুটি দিয়ে নদী পার হব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল।

স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি আর প্রতীক্ষার পর ৩০ লাখেরও বেশি টাকা খরচ করে নির্মিত হয়েছিল সেতুটি। কিন্তু নির্মাণের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই মুখ থুবড়ে পড়ে এটি। ৩ বছর আগে সেতুটি যেদিন ধসে পড়ে তার পরদিনই ছিল ঈদ।

সেতু হারানোর দুঃখে সেবারের ঈদটাই মাটি হয়ে যায় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরামপুর গ্রামবাসীর।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত তিন বছরে প্রশাসন থেকে একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, এমনকি দুদুক থেকে তদন্তের কথা বলা হলেও তাদের ভোগান্তির সমাধান হয়নি। এ অবস্থায় নিজেরাই অর্থ সংগ্রহ করে ড্রামের ভেলায় খাল পারাপারের একটি উপায় বের করে নিয়েছেন তারা। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এই পারাপারে যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা, হতে পারে প্রাণহানি।

এ বিষয়ে প্রশাসন বলছে, বড় বাজেট না থাকায় নতুন করে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সেতু ভেঙে যাওয়ায় গ্রামবাসী ড্রামের ভেলায় করে ঝুঁকিতে পণ্য পারাপার করছেন। ছবি: নিউজবাংলা

ফুলবাড়ীর বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনীরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নদী পারাপারে স্থানীয়দের ভোগান্তির চিত্র। কয়েকটি ভাসমান প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর বাঁশের মাচা তৈরি করে দুই পাশে দড়ি টেনে মানুষ আর মালামাল পার করা হচ্ছে। এখন পানি কম থাকায় পারাপারে সমস্যা কম হলেও বর্ষা মৌসুমে এটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়।

গ্রামবাসী জানায়, বর্ষা মৌসুমে এমনও দেখা যায়- প্রচণ্ড স্রোতে ড্রামের ভেলা ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও এ সময় মারাত্মক ঝুঁকির মধ্য দিয়ে প্রতিদিন অন্তত দুই বেলা খাল পার হয়। পানিতে পড়ে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে সেখানে।

নির্মাণের তিন মাসের মধ্যেই সেতুটি দেবে যাওয়ায় এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছিল গ্রামবাসী। তাদের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে বড় অনিয়ম হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। সাজা হয়নি দায়ী ব্যক্তিদেরও।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৬ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল ৪০ ফুট দৈর্ঘের ওই সেতু। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কাজটির তদারকি করেছিলেন। আর ঠিকাদার এ টি এম দেলোয়ার হোসেন টিটু সেতুটি নির্মাণ করেন।

গত তিন বছর ধরে অনেক দেনদরবার করেও সেতুটির বিষয়ে কোনো সমাধান পায়নি এলাকাবাসী।

স্থানীয় কামরুল, হাসান আলী ও মজিবর রহমান জানান, নিম্নমানের কাজের ফলে সেতুটির এমন দশা হয়েছে। অথচ অফিস বলছে বন্যায় ভেঙে গেছে।

ওই এলাকার শিক্ষার্থী নুসরাত, হামিদা ও জান্নাতী বলে, ‘ঈদের আগের দিন ব্রিজটি ভেঙে গিয়েছিল। আমরা অনেক আশা নিয়ে এই সেতুটি দিয়ে নদী পার হব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু সব আনন্দ মাটি হয়ে গেল। আমাদের আগের মতোই কষ্ট করে খাল পারাপার করতে হচ্ছে।’

এ বিষয়ে দায় এড়িয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সবুজ কুমার গুপ্ত বলেন, ‘ব্রিজটি বন্যার কারণে ভেঙে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও দুদক থেকে তদন্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আপনারা খোঁজখবর নিতে পারেন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে নতুন বড় কোনো প্রকল্প প্রস্তাবনা নেয়া হলে আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সেখানে পদক্ষেপ নেব।’

ভোগান্তির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আপাতত অস্থায়ী ভিত্তিতে বাঁশের সেতু নির্মাণের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরে সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’

এ বিভাগের আরো খবর