অর্থ আত্মসাতের মামলায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চার সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান ও মোহাম্মদ শাহজাহান আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। আবেদনের আংশিক শুনানি হয়েছে বুধবার।
বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানি শেষে জামিন আবেদন বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
বুধবার বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন শুনানি হয়।
আদালতে জামিনের আবেদন করা এম এ কাশেম ও রেহানা রহমানের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি, বেনজীরের পক্ষে ছিলে এএফ হাসান আরিফ আর শাহজাহানের পক্ষে ছিলেন ফিদা এম কামাল।
অন্য দিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ মোর্শেদ, ডেপুটি অ্যাটনি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আগাম জামিন প্রার্থনা করে বলেন, ‘আদালতের আদেশের মাধ্যমেই তারা জমি কিনেছেন। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সুতরাং এ অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলে না। এ ছাড়া অনেকেই আছেন শিল্পপতি। এ অবস্থায় আমরা জামিন প্রার্থনা করি।’
জামিন বিরোধিতা করে দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আসামিপক্ষের দাবি অনুযায়ী পৃথক পৃথক অপরাধ দেখলে হবে না। এটা ছিল পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ। যেখানে দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিচার হয়েছে, সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচার হয়, সাবেক সেনা প্রধানের বিচার হয়, সেখানে একজন শিল্পপতি বলে জামিন নেয়ার কোনো সুযোগ নাই।’
শুনানিতে খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘দুর্নীতিবাজের কোনো গ্রাউন্ড নাই। একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। এখানে অপরাধের গভীরতা দেখতে হবে। এ অবস্থায় তাদের আবেদন খারিজ করে জেলে পাঠানোর জন্য আদালতের কাছে আদেশ প্রার্থনা করছি।’
জামিনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে আসামিপক্ষ ফের তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে চান। যে কারণে আদালত বৃহস্পতিবার শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেয়।
গত ৫ মে মামলা করে দুদক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন, নর্থ সাউথের বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দীন আহমেদ, আশালয় হাউজিংয়ের আমিন মো. হিলালী।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো বোর্ড অফ ট্রাস্টিজ। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অফ অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট, ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারের সুপারিশ বা অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে বোর্ড অফ ট্রাস্টিজের কিছু সদস্যের অনুমোদন বা সম্মতির মাধ্যমে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ডেভেলপমেন্টের নামে ৯ হাজার ৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির ক্রয়মূল্য বাবদ ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা অতিরিক্ত অর্থ অপরাধজনকভাবে প্রদান/গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের হীন উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন আসামিরা।
পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকজনের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন তারা। সে এফডিআরের অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।