যান চলাচলে খুলে দেয়ার অপেক্ষায় থাকা পদ্মা সেতু পারাপারে টোলের পরিমাণ বেশি নির্ধারণ হয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর গুলশানে বুধবার দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ-সংক্রান্ত প্রশ্নে এই মন্তব্য করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে খুব বেশি স্ট্যাডি করিনি। কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এটা অত্যন্ত বেশি করা হয়েছে। যারা সেতুতে যাতায়াত করবেন, নদী দিয়ে যেতে তাদের আগে যে ব্যয় হতো, এখন তাদের তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যয় হবে।’
পদ্মা সেতু চলাচলের ক্ষেত্রে কী হারে টোল দিতে হবে মঙ্গলবার তা নির্ধারণ করেছে সরকার। নদী পারাপারে যানবাহন ভেদে টোল ঠিক করা হয়েছে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার বেশি।
এক প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকারের একমাত্র লক্ষ্য থাকে লুটপাট। জনগণের সম্পদকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের পকেটে ভরার। এরা সরলেই আমাদের অনেক পরিবর্তন হবে। জনগণের প্রতিনিধি আসবে এবং জবাবদিহিতা থাকবে, অনেক ভালো হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা, তাতে এটি একটি অশনিসংকেত। অদূর ভবিষ্যতে আমরা যে শ্রীলঙ্কার মতো একটা বিপদে পড়তে পারি, সেই আশঙ্কা আছে।’
এ সময় সোমবার দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্তগুলো জানান বিএনপি মহাসচিব। লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘১৩-১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি। টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অসহনীয় হয়ে উঠছে জিনিসপত্রের দাম। মনে হচ্ছে, আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও বেসামাল হয়ে উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। এটি দ্রত কমে আসছে। এভাবে যদি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বাড়তে থাকে এবং সেটা যদি রেমিট্যান্স দিয়ে পূরণ করা না যায়, তাহলে অতিদ্রত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ শেষ হয়ে যাবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রিজার্ভ শেষের কী ভয়াবহ পরিণতি শ্রীলঙ্কার চলমান পরিস্থিতি তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে মাত্র পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমদানি ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। আমদানি যে হারে বেড়েছে, রপ্তানি সে হারে বাড়েনি। আবার প্রবাসী আয়ও কমে গেছে। ফলে প্রতি মাসে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের শীর্ষ মহলের প্রত্যক্ষ মদদ, প্রশ্রয়, আশ্রয় ও অংশীদারত্বে পি কে হালদারের মতো অর্থ আত্মসাৎকারীর সৃষ্টি হয়েছে। কারণ সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা, বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, দুদক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কোনোক্রমেই প্রায় ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকার মতো আর্থিক জালিয়াতি করে দেশ থেকে নির্বিঘ্নে পলায়ন করা সম্ভব নয়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘গত ৪ বছরেও কোনো অর্থ আয় করতে পারেনি স্যাটেলাইট-১। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল ও গ্লামারাস উন্নয়নের ডামাডোল বাজাতেই এ ধরনের অপরিণামদর্শী প্রকল্প গ্রহণ করে দেশকে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করা হয়েছে।’