বরিশাল নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক শ্রমিক-মালিকদের মধ্যে আছে দুই পক্ষ। সে দুটির পক্ষে গিয়ে আবার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন বরিশালের সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার সদস্যসচিব মনীষা চক্রবর্তী।
এসব যানবাহনের লাইসেন্স দেয়া ও চাঁদাবাজির ইস্যু নিয়ে সোমবার পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছেন তারা। বিষয়টি আলোচিত হয়েছে নগরজুড়ে।
ইজিবাইক শ্রমিকদের ইস্যু নিয়ে মেয়র সাদিকের এই সমাবেশকে অনেকেই আগামী নির্বাচনে অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে। আলোচনা হচ্ছে, নির্বাচনের আগে এই পেশাজীবীদের হাতে রাখতে চান সাদিক আব্দুল্লাহ।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র থাকাকালে শওকত হোসেন হিরণ নগরীতে ২ হাজার ৬১০টি ব্যাটারিচালিত হলুদরঙা ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেন। সেটি বেড়ে এখন হয়েছে ১২ হাজারের মতো।
সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর সেই ২ হাজার ৬১০টি ইজিবাইকের লাইসেন্সের নবায়ন বন্ধ রাখেন। পুলিশ নানা সময় ইজিবাইক রাস্তায় আটক করে। যখনই হলুদ ইজিবাইক আটক হয়, তখনই মহাসড়ক অবরোধ করেন চালকরা।
পাশাপাশি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। নগরীতে কত রিকশা চলে, সংখ্যাটি সঠিকভাবে কেউই বলতে পারে না। তবে ধারণা করা হয়, এই সংখ্যা ১৫ হাজারেরও বেশি।
ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা কয়েক বছর ধরেই নগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা পায় পুলিশের কাছ থেকে।
ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিক-মালিকদের এখন দুটি সংগঠন হয়েছে বরিশাল নগরীতে। একটির নাম বরিশাল জেলা ও মহানগর (ইজিবাইক) ব্যাটারিচালিত অটো শ্রমিক সংগঠন এবং অপরটি ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ।
এর মধ্যে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদের উপদেষ্টা মনীষা চক্রবর্তী। অপর সংগঠনের পেছনে রয়েছেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
পাল্টাপাল্টি সমাবেশে সাদিক আব্দুল্লাহ ও মনীষা চক্রবর্তী বিপরীত সংগঠনের প্রতি চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন।
সোমবার বিকেলে সমাবেশের দিন নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যান ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশায় ভরে যায়। সেখানে বরিশাল জেলা ও মহানগর (ইজিবাইক) ব্যাটারিচালিত অটো শ্রমিক সংগঠন আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাদিক আব্দুল্লাহ।
সেখানে তিনি ব্যাটারির রিকশা চালানোর জন্য সিটি করপোরেশনের বদলে বিআরটিএর অনুমোদন চেয়ে আবেদনের সমালোচনা করেন।
সাদিক বলেন, ‘যখন তারা বোঝছে আমি ইজিবাইকের পারমিশন দিচ্ছি, এখন ওই দলের লোকজন টাকা খাইবে কেমনে? তাই বিআরটিএর পারমিশন চাইয়া একটা নাটক শুরু করছে। চলাচলে পারমিশন দেওয়ার কথা শুইনা তারা লাফ দিয়া পড়ছে, এর আগে তো তারা বিআরটিএর অনুমোদন চাইল না।
‘যারা ব্যাটারিচালিত রিকশা আর ইজিবাইক থেকে টাকাপয়সা উঠায়, তারা শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের সমালোচনা করে। হাজার হাজার লোকের কাছ থেকে টাকা নেয়। বাসদের নেতারা মাটির ব্যাংকে টাকা উঠাইয়া এখন এত প্রোগ্রামের টাকা পায় কই। হয় শ্রমিকদের চুষে খায়, নইলে দেশের বাইরে থেকে টাকা আসে। বিএনপির সাথে এখন অতিবামরা যুক্ত হইছে।’
মেয়র বলেন, তিন মাসের মধ্যে ইজিবাইকগুলোকে লাইসেন্স দেয়া হবে সিটি করপোরেশন থেকে। দেয়া হবে চালকদের প্রশিক্ষণ ও পোশাক।
এসব বিষয়ে মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার যদি এত টাকার লোভ থাকত, তাহলে লোভনীয় চাকরি ছেড়ে সংগ্রামের পথ বেছে নিতাম না। যেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের মদদে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের ওপর হামলা ও প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের দিকে অভিযোগ তোলা চোরের মায়ের বড় গলা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির পাল্টা অভিযোগও আনেন মনীষা। বলেন, ‘বরিশালের ইজিবাইক শ্রমিকদের বাসদ এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছে আর ক্ষমতাসীন দল এই চাঁদাবাজদের মদদ দিয়েছে। কাজেই মেয়রের এই বক্তব্য কেবলমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষপ্রসূতই নয়, তার এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও হাস্যকর।’
পুলিশ বলছে সিটি করপোরেশন নবায়ন না করায় নগরীতে চলা সব ইজিবাইক অবৈধ। এসব রিকশা আটক হলে মহাসড়ক অবরোধ অথবা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তদবির আসে।
বরিশাল মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শেখ মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘অবৈধ যেসব যানবাহন রয়েছে সেগুলো আমরা প্রতিনিয়ত আটক করছি। মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা যায় এসব আটক নিয়ে। তবে সব বিষয় মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।’