আন্দোলনের মুখে এক যুগ আগে পরিকল্পনা বাতিল করা হলেও ফের মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর করার আলোচনা উঠেছে।
বুধবার অর্থনৈতিকবিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতামতের অপেক্ষায় রাখা হয় বিষয়টি।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য স্থান নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে দুটি বিকল্প নিয়ে কথা হয়।
কয়েকজন মন্ত্রী মাদারীপুর-শরীয়তপুরে করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, আগের জায়গায় অর্থাৎ মুন্সীগঞ্জে বিমানবন্দরটি হলে ভালো হয়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, মাদারীপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব বেশি। এখানে বিমানবন্দর তৈরি করা হলে যানজট বাড়বে। তার চেয়ে মুন্সীগঞ্জ হলে ভালো হয়। তবে এটা নিয়ে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর আশপাশে আন্তর্জাতিক একটি বিমানবন্দর নির্মাণের বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি আধুনিক বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়, যে বিমানবন্দরটি হবে আঞ্চলিক সংযোগের গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এর নাম ঠিক করা হয় জাতির পিতার নামে।
কিন্তু নানা জটিলতার কারণে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান বাছাইয়ের কাজ করা যায়নি।
সে সময় বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য কয়েকটি স্থান প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। প্রথম প্রস্তাব ছিল ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায়। এরপর টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলায় নদীর তীরে ১০ কিলোমিটার চর এলাকায় স্থান নির্বাচন করা হয়। কিন্তু একটি স্থানও পছন্দ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি ঢাকার আশপাশে স্থান নির্বাচনের নির্দেশ দেন।
২০১০ সালে কয়েকটি জায়গার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিহিত করা হয়। তিনি মুন্সীগঞ্জের আড়িয়ল বিলকে পছন্দ করেন।
প্রায় ২৫ হাজার একর জমিতে এই বিমানবন্দর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপির মাধ্যমে এটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
পরিকল্পনা হয়, বিমানবন্দর ঘিরে হবে বঙ্গবন্ধু সিটি। তাতে থাকবে পর্যটন কেন্দ্র। থাকবে মনোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সুবিশাল বাণিজ্যিক ভবন, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল নিরাপত্তাবেষ্টনী, উন্নত সড়ক, যোগাযোগব্যবস্থা ও আধুনিক ভবন।
কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের বিরোধিতা করেন। আন্দোলনের মুখে ওই জায়গায় বিমানবন্দর নির্মাণ করা হবে না বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এর পর থেকে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে এ প্রকল্পের কার্যক্রম। এরপর ২০১৯ সালে পদ্মার পশ্চিম পারে জাজিরা ও শিবচরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য সম্ভাব্য সমীক্ষা শুরু হয়।
কিন্তু তাতেও স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে বাধা আসে। যে কারণে বিমানবন্দরটি কোথায় নির্মিত হবে, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় বাড়ানো হয়। বিমানবন্দরটি কোন জাগায় নির্মিত হবে, সে বিষয়ে সমীক্ষা চালানোর জন্য সরকার জাপানি নিপ্পন কোয়িকে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১২০ কোটি টাকা।
কিন্তু করোনার কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ না করতে পারায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১২৯ কোটি টাকা। এই বৈঠকে সেই বাড়তি দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।