বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মাঠের পর ঘরেও ধান নষ্ট বানের জলে’

  •    
  • ১৮ মে, ২০২২ ১৫:৫৮

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সব নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। পানি খুবই ধীরে কমছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়তে পারে।’

‘প্রথমে হাওর জুড়িয়া পানি আইলো, তাড়াহুড়া করিয়া গিয়া ধান কাটলাম। এখন গেল দুই দিনের বৃষ্টিতে ঘরেও পানি আইয়া কাটা ধান নষ্ট করি দিসে। এখন এই ভিজা ধান কিলান কিতা করতাম বুঝিয়া উঠতে পাররাম না।’

এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন সুনামগঞ্জের লালপুর এলাকার কৃষক শফিক।

টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের হাওর ও নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তা প্রবেশ করছে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল এলাকাগুলোতে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন হাওরের মানুষেরা।

বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদনদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এদিকে সরেজমিনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গৌরারং, সাহেববাড়ি ঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা যায় অনেক ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক কাঁচা সড়ক পানিতে ধসে গেছে। ওইসব এলাকায় এখন যোগাযোগের মাধ্যম হয়েছে নৌকা। সেই নৌকা করে ধান নিয়ে রাস্তায় শুকাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

এ সময় দেখা যায়, যাদের ধান আর ঘর দুটোই পানিতে ডুবে গেছে তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে সেই শঙ্কায় দিন কাটছে হাওর এলাকার মানুষজনের।

লালপুর এলাকার জামিলা বেগম বলেন, ‘১০ কেয়ার (একর) জমিত ধান করছিলাম। মাত্র দুই কেয়ারের ধান তুলতে পারছি। এখন এই ধানগুলোও ভেজা। তিন দিন ধরি ধানগুলো পানিত ভিজেছে। আজ রোদ ওঠায় রাস্তার নিয়ে শুকাচ্ছি। ধান বেচলে এই টাকা দিয়া সংসার কয়দিনইবা চলব।’

সিলেটের শাহপরান থানায় কাজ করেন হোসেন মিয়া। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন তিনি। বাড়িতে এসে মাথায় হাত পড়েছে তার।

তিনি বলেন, ‘বড় শখ করে ধান করেছিলাম। আমার ধানগুলো বৈশাখ মাসেই পাকে। কিন্তু বাড়ি না থাকায় পাকা ধান মাঠেই ছিল। এখন ধান কাটতে বাড়িতে এসে এক দিনও রেস্ট নিতে পারিনি। এরই মধ্যে এক রাতের বৃষ্টি আমার পাকা ধান সব নষ্ট করে দিয়েছে।’

বাজারে পণ্যের দামে দিশেহারা হাওরের ক্ষতিগ্রস্তরা

একে তো ধানের ক্ষতি এর ওপর বাজারে পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে বিপাকে পড়েছেন হাওরের কৃষকরা। চাল ঘরে থাকলেও তেল, নুন আর সবজি কিনতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

গৌরারং এলাকায় ঘরে পানি ঢোকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নুর আলী। তিনি বলেন, ‘আমার ধান করার জমি নেই। মানুষের জমির ধান কেটে কিছু ধান পেয়েছিলাম। এর থেকে চাল করেছি। কিন্তু শুধু চাল দিয়ে কী করব। তেল, নুন, সবজিও তো লাগে। তেলের দামও ২০০ টাকা লিটার। দরিদ্ররা বাঁচবে কী করে।’

রথি দাশ নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘ধানের দাম সরকার ঠিক করে দিলেও আমরা এই দামে ধান দিতে পারি না। আমাদের থেকে যে দামে ধান নেয়া হয় তা দিয়ে এক মাস ভালো করে খাওয়া যায় না। বাজারে যাইতেও ভয় লাগে। এর মধ্যে পানি বাড়ছে। ছোট ছেলে জাল নিয়ে মাছ ধরতে গেছে। মাছ আনলে ভাত খাইতে পারতাম।’

সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি কার্যালয়ের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘গত তিন দিনের বৃষ্টিতে হাওরের অনেক পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত ৬৫০ হেক্টর জমির পাকা ধান পানিতে ডুবে গেছে।’

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘সব নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে। পানি খুবই ধীরে কমছে। পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি আরও বাড়তে পারে।’

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের সহায়তা দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর