সিলেট নগরের তালতলা এলকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কার্যালয়। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের ভবন।
মঙ্গলবার বিকেলে তালতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিস ভবনের ভেতরে পানি ঢুকে গেছে। পানিতে ডুবে আছে আগুন নেভানোর গাড়িও। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই ভবনে বসবাস করা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বাধ্য হয়ে তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে নগরের রিকাবীবাজার এলাকার কাজী নজরুল অডিটরিয়ামে।
সন্ধ্যায় নজরুল অডিটরিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, অডিটরিয়ামের সামনেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা। এই মিলনায়তনই এখন ফায়ার সার্ভিসের অস্থায়ী কন্ট্রোল রুম। আর অডিটরিয়ামের বারান্দায় নিজেদের অস্থায়ী শোয়ার জায়গা করে নিয়েছেন কর্মীরা।
অডিটরিয়ামের বারান্দায় বিছানা পেতে বসে থাকা ফায়ার সার্ভিসকর্মী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘পানিতে আমাদের অফিস তলিয়ে গেছে। তাই এখানে আশ্রয় নিয়েছি। এখানেই রাত কাটাতে হবে। আবার কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এখান থেকেই আমাদের টিম যাবে।’
জলমগ্ন সিলেট নগরীর ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়
শুধু ফায়ার সার্ভিস কার্যালয় নয়, সিলেটে সাম্প্রতিককালের ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ জরুরি সেবা প্রধানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যেমন বিপাকে পড়েছেন, তেমন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সেবাগ্রহীতারও।
নগরের তালতলা এলাকারই বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ওই ভবনের সামনের সড়কে হাঁটু পানি। এই পানি ব্যাংক ভবনের চত্বর ছুঁয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে সঞ্চয়পত্র খুলতে ব্যাংকে এসেছিলেন দক্ষিণ সুরমার খোজার খলা এলাকার বাসিন্দা আবুল হাসনাত। তবে পানি দেখে তিনি আর ব্যাংকের ভেতরে ঢুকেননি।
হাসনাত বলেন, ‘ব্যাংকে ঢুকতে হলে পুরো ভিজে যেতে হবে। এই ময়লা পানিতে ভিজলে অসুখও বাঁধতে পারে।’
মঙ্গলবার দিনভর নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, উপ মহা-পুলিশ পরিদর্শকের কার্যালয়, কতোয়ালি থানা, বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়, তোপখানা সড়ক ও জনপথের কার্যালয়, সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি, বিদ্যুতের আঞ্চলিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পানি উঠে গেছে সিলেট নগর ও উপজেলাগুলোর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও।
মঙ্গলবার বিকেলে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে জরুরি কাজে আসা মারুফ হাসান বলেন, ‘পচা পানি পাড়ি দিয়ে অফিসে যেতে হয়েছে। কিন্তু অফিসে গিয়ে কাজ হয়নি। বন্যার কারণে আজ কাজ হবে না বলে জানানো হয়েছে।’
এদিকে, বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট নগরের চালিবন্দর এলাকার মহাশশ্মানঘাট। সিলেট নগরের মধ্যে এই একটিমাত্র স্থানে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা মৃতদেহ দাহ করেন। এখানে এখন আর মরদেহ দাহ করার কোনো উপায় নেই।
শ্মশানঘাট সংস্কার ও সংরক্ষণ কমিটি, সিলেটের সভাপতি বেদানন্দ ভট্টাচার্য জানান, শ্মশানঘাটের শবদাহ পোড়ানোর চুলা তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সনাতন ধর্মাবলম্বী সবাইকে সিলেট নগরের উপকেণ্ঠর দেবপুর এলাকার শ্মশানঘাটে দাহকার্য সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান তিনি।
নগরীর একমাত্র শ্মশানঘাটে মরদেহ দাহ করার চুল্লিটিও তলিয়ে গেছে
তবে সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান দাবি করেছেন, কিছু সরকারি স্থাপনায় পানি উঠলেও সেবা ব্যাহত হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানেরই স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
বন্যায় জেলাজুড়ে ১৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এসব আশ্রয়কেন্দ্রে খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনওদের সার্বক্ষণিক নজরদারি করার নির্দেশনা দেয়া আছে।
জেলা প্রশাসক জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য দ্বিতীয় দফায় ১০০ মেট্রিকটন চাল ও ৩ হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর আগে ১২৯ মেট্রিকটন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকানো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতেও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ২০০৪ সালের পর নদীর পানি কখনো এতোটা বাড়েনি। ১৮ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বড় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আর আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছেন, ২৩ জুন পর্যন্ত সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে।