বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শ্রমিক সংকটে জমিতেই নষ্ট হচ্ছে ধান

  •    
  • ১৭ মে, ২০২২ ১৫:০৬

কাহালু উপজেলার এরুল গ্রামের মোহাম্মদ ইনছান বলেন, ‘পানিতে জমে থাকা ধান কাটার সময় বিঘায় প্রায় ৪ মণ ধান নষ্ট হয়। আবার পানিতে পচে বিঘায় আরও ৪ থেকে ৫ মণ নষ্ট। এদিকে পানিতে ডুবে থাকায় এসব ধানের গাছ গজিয়ে গেছে। এতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে কড়া রোদ না পেলে ধানের মান ভালো থাকবে না। বোরো আবাদে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিক সংকট। কারণ এত আগে আমাদের বগুড়ায় ধান কাটার শ্রমিকরা আসেন না। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলে ধান কাটার কারণে বেশির ভাগ শ্রমিক সেখানে গিয়েছিল। হারভেস্টার মেশিনও ওই এলাকার দিকে ছিল। ফলে আমরা চাইলেও ধান কাটতে পারিনি।’

সকালের রোদ দেখে রাস্তার ধারে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছিলেন বগুড়ার শাজাহানপুরের বয়রাদীঘি এলাকার শামিম আহমেদ। বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া ধান কাটার পর সপ্তাহখানেক ধরে এভাবেই চলছে তার।

কাজের ফাঁকে জানালেন, আবাদের দুই বিঘা জমির ধান বৃষ্টি আর ঝড়ো বাতাসে হেলে পড়েছিল। এতে তিন ভাগ ধানের এক ভাগ মাঠেই ফেলে আসতে হয়েছে তাকে।

শামিমের মতো এমন দশা বগুড়ার কয়েকটি উপজেলার অনেক কৃষকের। কালবৈশাখী ঝড়ে হেলে পড়া বোরো ধান পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে। সময়মতো চাহিদা অনুযায়ী ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক।

কৃষকরা জানান, বৃষ্টিতে জমিতে প্রতি বিঘায় অন্তত ৮ মণ ধান নষ্ট হয়েছে। শঙ্কা, এবার বোরো ধানে তাদের লোকসান হতে পারে। খরচের টাকা তুলতে পারবেন কি না, সেই চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও উৎপাদনের ঘাটতির কথা বলছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এখনও মাঠে বোরো ধান রয়েছে। সব ধান কাটা শেষ হলে সঠিক ক্ষতির হিসাব বের করা যাবে।

শাজাহানপুরের কৃষক শামিম আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে ঝড়ে জমির ধান মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। সে সময় শ্রমিক পাওয়া যায়নি। পরে প্রতি বিঘায় ৬ হাজার টাকা খরচ করে ধান কাটি।’

আরেক কৃষক শামিম বলেন, ‘ধান ঘরে তোলার আগেই বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। যে ধান পেয়েছি, তা বেচলেও খরচ উঠবে না। আবার পানিতে ভেজা এই ধান ঘরেও রাখা যাবে না। এখন রোদ পেলে শুকিয়ে বিক্রি করা যাবে।’

বোরো চাষের এ খরচ নিয়ে বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বিঘাপ্রতি জমিতে বোরো ধানে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ ধান কাটার মজুরিতে। প্রতি বিঘায় শ্রমিকেরা নিচ্ছেন ৬ হাজার টাকা করে। তবে যে জমিতে পানি জমেনি সেখানে মজুরি কম। এর পরের খরচ সার ও কীটনাশকে, অন্তত ৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। এ ছাড়া জমি হাল দেয়া, নিড়ানি, ধান মাড়াই ও পরিবহনে আরও ৪ হাজার টাকা খরচ কৃষকের।

ধান চাষে ব্যয়ের হিসাব দেয়া একজন কৃষক কাহালু উপজেলার এরুল গ্রামের মোহাম্মদ ইনছান। তিনি ৩০ বিঘা জমি পত্তন কৃষিকাজ করেন। মূলত তার আবাদকৃত জমি থেকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ধানের বীজ সরবরাহ করা হয়।

ইনছান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পানিতে জমে থাকা ধান কাটার সময় বিঘায় প্রায় ৪ মণ ধান নষ্ট হয়। আবার পানিতে পচে বিঘায় আরও ৪ থেকে ৫ মণ নষ্ট। এদিকে পানিতে ডুবে থাকায় এসব ধানের গাছ গজিয়ে গেছে। এতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে কড়া রোদ না পেলে ধানের মান ভালো থাকবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘বোরো আবাদে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রমিক সংকট। কারণ এত আগে আমাদের বগুড়ায় ধান কাটার শ্রমিকরা আসেন না। এ ছাড়া হাওর অঞ্চলে ধান কাটার কারণে বেশির ভাগ শ্রমিক সেখানে গিয়েছিল। হারভেস্টার মেশিনও ওই এলাকার দিকে ছিল। ফলে আমরা চাইলেও ধান কাটতে পারিনি।’

মামুন সরকার নামে শাজাহানপুরের আরেক কৃষক জানান, বাজারে ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকায়। কিন্তু ভেজা ধান নিতে চাচ্ছে না কেউ। এ জন্য ধান শুকানোর ব্যবস্থা করছেন তিনি।

শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া এলাকার এক জমিতে গিয়ে কথা হয় শ্রমিক শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি নাটোরের জামতলী গ্রাম থেকে বগুড়া এসেছেন ধান কাটতে।

তিনি জানান, চৈত্র-বৈশাখ মাস পর্যন্ত নিজের জেলায় ধান কাটার কাজ করেন। এরপর বগুড়ায় আসেন। এবার নাটোরেই প্রতি বিঘায় ৭ থেকে শুরু করে সাড়ে ৫ হাজার টাকা মজুরি নিয়েছেন তারা। পানি জমে থাকার ওপর এই টাকার হিসাব হয়। বগুড়ার শাজাহানপুরে এক বিঘা ধান কাটায় চুক্তি করেছেন সাড়ে ৫ হাজার টাকা।

আরেক মাঠে গিয়ে কথা বললে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতি বছর বগুড়ায় আসা হয় তার। এবার ঈদের জন্য একটু দেরি হয়েছে।

জেলা কৃষি দপ্তর জানায়, বগুড়ায় এবার ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৮ লাখ ৭ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে ২৯ এপ্রিল রাতে কালবৈশাখী ঝড়ে বগুড়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই সময় জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছিল, কালবৈশাখীতে বগুড়ায় ১৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরে গত ১৩ মে জেলায় আরেকটি ঝড়ে বোরো ধানে আরও ক্ষয়ক্ষতি হয়।

জেলার বোরো ধানের মোট ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বগুড়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক। তিনি জানান, মাঠের ৬০ ভাগ বোরো ধান কাটা হয়েছে। যে ধান পরে চাষ করা হয়েছিল, সেগুলোই শুধু জমিতে আছে। মাঠপর্যায়ে জরিপের কাজ চলছে। এতে আরও কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।

এনামুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হিসাবের পাশাপাশি কৃষকের তালিকা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি হলে কৃষককে সহযোগিতা করার প্রস্তাব পাঠানো হবে মন্ত্রণালয়ে।’

এ বিভাগের আরো খবর