বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পি কে হালদারকে কবে ফিরিয়ে আনা যাবে

  •    
  • ১৬ মে, ২০২২ ২২:৩৭

বাংলাদেশের পলাতক আসামি পি কে হালদারকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। এ প্রক্রিয়ায় কতদিন লাগতে পারে, এ সম্পর্কে কেউ ধারণা দিতে পারছেন না। এর আগেও ভারত থেকে দুজন পলাতক আসামিকে ফিরিয়ে এনেছিল বাংলাদেশ। তবে এবার প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে। কেননা জালিয়াতির অপরাধে আগে ভারতের আদালতে বিচারের মুখোমুখি হতে পি কে হালদারকে। 

ভারতে আটক আর্থিক কেলেঙ্কারির নায়ক প্রশান্ত কুমার হালদার বা পি কে হালদারকে কবে দেশে ফেরত আনা যাবে– তা বলতে পারছেন না কেউই। ভারতের অর্থ গোয়েন্দা সংস্থা তাকে গ্রেপ্তার করেছে নাগরিকত্ব সনদ জালিয়াতি, অবৈধভাবে অবস্থানসহ সে দেশে করা একাধিক অপরাধের দায়ে। ফলে সেসব মামলার বিচার ও শাস্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে হতে পারে।

আবার কূটনীতিক ও আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যেই পি কে হালদারকে দেশে ফেরানো সম্ভব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পি কে হালদার বাংলাদেশের মোস্ট ওয়ান্টেড ব্যক্তি। তিনি ভারতে গ্রেপ্তার হলেও অফিসিয়ালি বিষয়টি আমাদের এখনও জানানো হয়নি। তাকে ফিরিয়ে আনতে আইনিভাবে যা করা প্রয়োজন, আমরা তা-ই করব। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজপত্র পাওয়ার পর ফিরিয়ে আনতে আইনি চেষ্টা অব্যাহত রাখব।

‘তিনি (পি কে হালদার) যেখানে আছেন, সেখানে কী করেছেন, সেখানকার আইনের মুখোমুখি হবেন কিনা– এসব বিষয় দেখার পর আমরাও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাইব।’

এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সোমবার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ভারতে আটক পি কে হালদারের বিষয়ে দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে কোনো কিছু এখনও জানায়নি। জানালে, দুই দেশের পূর্বনির্ধারিত নিয়ম মতো তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র কিংবা পররাষ্ট্র যে কোনো মন্ত্রণালয়কে জানাতে পারে দেশটি।

‘পি কে হালদারের বিরুদ্ধে যেহেতু সে দেশেও মামলা চলমান, সে ক্ষেত্রে ভারতেও বিচার ও শাস্তি হতে পারে। পরে বাংলাদেশকে ফেরত দিলে এখানেও বিচার ও শাস্তি হবে। অথবা, ভারত বিচার শেষে বাংলাদেশকে দিলে এখানেও শাস্তি কার্যকর হতে পারে। যোগাযোগ না হওয়ায় এখনই সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। পাশাপাশি দেশে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে জনগণের অর্থ ফিরিয়ে দেয়া হবে।

‘জালিয়াতির কারণে ভারতের আইনে তার বিচার হবে। তিনি মিথ্যা নাগরিকত্ব সনদ নিয়েছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন। আমাদের এখানে অর্থ পাচারের মামলাটা বিচারাধীন রয়ে গেছে। সেই মামলায় বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে তাকে আনার ব্যবস্থা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার দেশে থাকা অবৈধ সম্পদ এরই মধ্যে জব্দ করা হয়েছে। জনগণের টাকা জনগণকে ভাগ করে দেয়া হবে।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালিউর রহমান মনে করেন, পি কে হালদারকে দেশে ফেরত আনতে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন ‘যে তথ্য-উপাত্ত তারা (ইডি) পাবে, সেগুলো বরং আমাদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এখানে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেবে। এটা আসলে এক দিনের ব্যাপার। যেহেতু তার বিরুদ্ধে সেখানে মামলা হয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে। বন্দিবিনিময় চুক্তির সব প্রক্রিয়া শেষ হতে বড় জোর ছয় মাস সময় লাগবে।’

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা রয়েছে। তার মধ্যে ৩৬টি অর্থ পাচার ও একটি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন মামলা।

তিনি বলেন, ‘দুদকের করা এরই মধ্যে তিনটি মামলার তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। অন্যগুলো চলমান। তাকে যদি দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা যায়, সে ক্ষেত্রে দুদকের অনুমতি নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

এদিকে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘পি কে হালদারের একটি মামলার চার্জশিট হয়েছে। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করেছিলাম। আমরা ইতিমধ্যে ইন্টারপোল অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা আমাদের জানিয়েছেন যে, তারা ইতিমধ্যে ভারতের যে ইন্টারপোল অথরিটি রয়েছে, তাদের যে বডি রয়েছে এনসিবি, সেখানে যোগাযোগ করেছেন এবং ওই আসামিকে দ্রুত যাতে বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে আসা যায় সেই বিষয়ে ভারতে ইন্টারপোলের কাউন্টারপার্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আমরা আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব সেটা করা হবে।

‘এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে যত দ্রুত সম্ভব আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করা যায়। আপনারা জানেন ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভারতে যে সম্পত্তির খবর আমরা পাচ্ছি, তার কিছু কিছু আমরা আগে জানতাম। আরও কিছু খবর আমরা জানছি। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কাছে আমরা অনুরোধ জানাব। পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও আমরা অনুরোধ করব, তাদের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব সেখানকার আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে যাতে আমাদের এখানে আনতে পারি। সেসব তথ্য নিয়ে নতুন করে সাপলিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে পরিবর্তিতে পদক্ষেপ নেব।

‘ইন্টারপোল খুব দ্রুত রিঅ্যাক্ট করেছে, তারা দ্রুতই আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় ইন্টারপোল বডির সাথে যোগাযোগ করে আসামিকে ফেরত আনার পদক্ষেপ নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতে যেহেতু তারা বেশ কিছু মামলা করেছে, হয়তো আরও মামলা করবে। দুই-একটা মামলায় রিমান্ডেও নিয়েছে। এখন আমাদের দিক থেকে প্রেশার ও চেষ্টা থাকবে, যত দ্রুত তাকে আমরা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে পারি। সে জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ ও চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

‘সেখান থেকে কতদিনের মধ্যে ফেরত আনা যায় সেটা স্পেসেফিক বলা কঠিন। সেখানে মামলা বা এর বিচার কতদিন লাগবে অথবা বিচারের আগেও ফেরত আনা যাবে কি যাবে না, এই বিভিন্ন বিষয়ের কারণে সময়ে বিষয়টি নির্দিষ্টি করে বলা যাবে না।’

এ দিকে, এরই মধ্যে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভারতের অর্থ গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) অন্তত ২২টি মামলায় পি কে হালদারসহ তার সহযোগীদের অভিযুক্ত করতে যাচ্ছে। তবে তাকে বাংলাদেশে ফেরানো সহজ করতে মামলার সংখ্যা কমাতে পারে ইডি।

বন্দি বিনিময় কতোটা সময়সাপেক্ষ

কূটনৈতিক সূত্র মতে, ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট থাকা আসামি হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনকে প্রাধান্য দিয়ে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট অ্যাক্ট, মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ফরেনার্স অ্যাক্টসহ ৮-১০টি মামলার আসামি হিসেবে প্রাথমিক অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারে ভারতীয় সংস্থাটি।

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের দেয়া তথ্য মতে, পি কে হালদারকে দেশে ফেরাতে হলে আপাতত অপেক্ষা করতে হবে ভারতের আদালতে তার সবকটি মামলার বিচার ও সাজা ঘোষণা পর্যন্ত। এর পরই বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় সাজার মেয়াদ বাংলাদেশের জেল হেফাজতে পূরণ করার শর্তে দেশে ফেরানো যেতে পারে পি কে হালদারসহ বাকি ছয় অভিযুক্তকে।

সূত্র মতে, স্বাভাবিক নিয়মে অভিযোগপত্র হালকা করার কোনো সুযোগ নেই। তবে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে এই আসামিদের দেশে ফেরানোর ব্যাপারে বড় চাপ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হলে হতে পারে অনেক কিছুই।

এর আগেও বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি নূর হোসেন, দিল্লির তিহার জেলে বন্দি থাকা বাদল ফারাজিকে দেশে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। নূর হোসেনের ক্ষেত্রে অস্ত্র আইন ও ফরেনার্স অ্যাক্টের মামলা ছিল। যাবজ্জীবন সাজার আসামি বাদল ফারাজির ক্ষেত্রে ছিল সরাসরি খুনের অভিযোগ। দুই ক্ষেত্রেই ভারতের আদালতে ঘোষিত সাজার মেয়াদ বাংলাদেশে শেষ করতে হবে- এমন শর্তেই দুই আসামিকে ফেরত পেয়েছিল বাংলাদেশ।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের মতে, আদালতের মাধ্যমে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে আইনি পথেই দেশে ফেরানো সম্ভব হবে। অবৈধভাবে নাগরিকত্ব নেয়ার অভিযোগে ভারতে তার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হলে সেটি সময় সাপেক্ষও হয়ে উঠতে পারে। পি কে হালদার অবৈধভাবে ভারতের পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড নিয়েছেন। ভারতের আইনে এটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে ভারতে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে।

এদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন রোববার সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তির আলোকে পি কে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। কারণ তিনি জনগণের টাকা পাচার করেছেন। ভারতে বিভিন্ন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবস্থান করে আসছিলেন। সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু আমাদের যে অর্থপাচারের বিষয়টা, আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়, সেটা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলায় তাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

‘নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বন্দিকে ফেরত আনতে হলে ভারতের কর্তৃপক্ষের কাছে বন্দিকে প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানানো হয়। এরপর আদালতের কাছে সেই বন্দিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয়। আদালত অনুমতি দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ সেই বন্দিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে।

‘বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈঠকের মাধ্যমে বন্দি হস্তান্তর করে। বিজিবির কাছ থেকে ওই ব্যক্তিকে গ্রহণ করে আদালতে হাজির করে বিচারের মুখোমুখি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

এ বিভাগের আরো খবর