ট্রাভেলিং টিকিট এক্সামিনার (টিটিই) শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগকারী রেলমন্ত্রীর ভাগনে ইমরুল কায়েস প্রান্তের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেনি তদন্ত কমিটি। তবে তাকে টিটিইর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটির প্রধান।
এ বিষয়ে প্রান্তের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে ব্যস্ত থাকার অজুহাত দিয়ে প্রথমে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। পরে আর ফোন রিসিভ করেননি।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সোমবার পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তদন্ত কমিটির প্রধান সাজেদুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘মূল প্রতিবেদন সাত পৃষ্ঠার। সঙ্গে আরও ৪০ পৃষ্ঠার তথ্য-উপাত্ত যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে শফিকুলের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তিনি নির্দোষ। অভিযোগকারী যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ে এসে টিটিই শফিকুলের কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।
‘আর ট্রেনের গার্ড শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।’
রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার অপরাধে গত ৫ মে ইমরুল কায়েস প্রান্ত, ওমর ও হাসানকে জরিমানা করেছিলেন টিটিই শফিকুল। এর মধ্যে প্রান্ত টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
৫ মে রাতের এ ঘটনার পর ওই টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছিল, যা নিয়ে তৈরি হয় সমালোচনা।
প্রান্তর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৭ মে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে রেল বিভাগ। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরে সময় দুই দিন বাড়ানো হয়। এর পর তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত হলেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকায় সোমবার তা জমা দেয়ার কথা জানানো হয়।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। প্রতিবেদন গ্রহণ করেন পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) শাহিদুল ইসলাম।
ডিআরএম শাহিদুল ইসলাম জানান, প্রতিবেদনে টিটিইকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলা হয়েছে। ওই ট্রেনের গার্ড শরিফুল বিনা টিকিটের যাত্রী ইমরুল কায়েস প্রান্তকে টিটিইর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে উসকানি দেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় টিটিই শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার একটা আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি অন্যায় করিনি কিংবা কখনও অন্যায়ের সঙ্গে আপসও করিনি। আমার বিশ্বাস ছিল সত্যের জয় হবে, তা প্রমাণ হওয়ায় আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ডিআরএম শাহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো কারণে ট্রেনের গার্ড শরিফুল টিটিই শফিকুলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। গার্ড শরিফুলের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
এই গার্ড শরিফুলকে রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার ফোন করেছিলেন বলে এর আগে সংবাদমাধ্যমকে জানান প্রান্তর মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা। তিনি বলেন, ‘রেলমন্ত্রীর ওয়াইফ গার্ডকে (শরিফুল) ফোন দিয়ে বলছে, আমার বাচ্চারা গেল, ঠিকঠাকভাবে নামায়ে দিয়েন।’
রেলমন্ত্রীর স্ত্রী বা তার মামাতো বোনের সম্পৃক্ততার প্রশ্নে ডিআরএম বলেন, বিষয়টি ছিল ট্রেনের মধ্যে যাত্রীর সঙ্গে টিটিই শফিকুলের খারাপ আচরণের অভিযোগ। সে কারণে শুধু সেই বিষয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এর বাইরে কোনো বিষয় এর সঙ্গে আনা হয়নি। আর অভিযোগকারী বা অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ কেউই এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। ওই দিন ট্রেনে দায়িত্ব পালনকারী গার্ড, পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। মোট ৯ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি।’
সমালোচনার মুখে এর আগে ৮ মে টিটিই শফিকুলকে দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ১০ মে কাজে যোগ দেন শফিকুল।
তবে তাকে বরখাস্ত করার দায় চাপানো হয় পাকশীর রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্য কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের ওপর।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে খবর আসে, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আকতার মনির নির্দেশে শফিককে বরখাস্ত করা হয়। রেলমন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, তার স্ত্রী টিটিই শফিকুলের বিরুদ্ধে টেলিফোন করে অভিযোগ দিয়েছিলেন।
এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ৮ মে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, তার ‘নবপরিণীতা’র বোঝার এখনও অনেক কিছু বাকি।