নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালনের সময় এক ভুয়া চিকিৎসককে আটক করেছে পুলিশ। রোববার বিকেল ৪টার দিকে সায়েম আব্দুল্লাহ জয় নামের ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
সোমবার দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হয়। ওদিকে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসারকে শোকজ করার পাশাপাশি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।
পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তার সায়েম আব্দুল্লাহ জয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার নোয়াপাই গ্রামের মাহতাব উদ্দিনের ছেলে। তার বয়স ২৪ বছর। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। তবে কোনো চিকিৎসক নন। তা ছাড়া ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততাও নেই।
স্থানীয়দের বরাতে ওসি জানান, রোববার বিকেল ৪টার দিকে ওই ব্যক্তি পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের ৭ নম্বর কক্ষে বসে রোগী দেখছিলেন। তিনি পছন্দমতো কোম্পানির ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন দেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও রোগী পাঠাচ্ছিলেন। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা লোকদের মধ্য থেকে কেউ তাকে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে তাকে আটক করে থানায় খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে অভিযোগের সত্যতা পান। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে তাকে আটক করে থানায় নেয়া হয়।
ওই দিন রাতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (স্যাকমো) শ্রীকান্ত রঞ্জন সরকার বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করেন। পরে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে তাকে আদালতে তোলা হয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘রোববার বিকেলে জরুরি বিভাগের ৭ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব পালন করছিলেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার শ্রীকান্ত রঞ্জন সরকার। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি কীভাবে সেখানে রোগী দেখতে বসলেন তা আমাদের জানা নেই। তাই এ বিষয়ে কারণ দর্শানোর (শোকজ) জন্য শ্রীকান্তকে সোমবার নোটিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া আমাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত সায়েম আব্দুল্লাহ জয় ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট। তিনি কোনো চিকিৎসক নন। ২০১৯ সালে তিনি আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিন মাসের ইন্টার্নশিপ শেষ করেন। এরপর তার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাতায়াত ছিল এবং চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে মাঝেমধ্যে কাজ করতেন। তিনি এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিয়োগ পাওয়া কোনো স্টাফ নন। এখানে রোগী দেখার বা প্রেসক্রিপশন করার কোনো অধিকার তার নেই।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কারও গাফিলতি বা সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, সায়েম আব্দুল্লাহ যে চিকিৎসক নন তা হাসপাতালের অনেকেই জানতেন। তাদেরই কেউ খবরটা ছড়িয়ে তাকে ধরিয়ে দিতে পারে।