দেশে দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা করা হলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এক নম্বরে থাকবে বলে দাবি করেছেন সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
সোমবার মেয়রের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
মেয়র বলেন, ‘গত দুই বছরে সিটি করপোরেশনের হয়ে অনেক কাজই করা হয়েছে। তবে সব থেকে বেশি যে কাজটি করা হয়েছে তা হলো, এখান থেকে দুর্নীতি সরানো। এখন বাংলাদেশের মধ্যে যদি একটি দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান থাকে, তবে তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকাবাসীর মৌলিক সেবা নিশ্চিত করাকে আমরা বিগত দুই বছরে অগ্রাধিকার দিয়েছি। মশক নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ গ্রহণ করার পাশাপাশি ঐতিহ্যের সুন্দর, সচল, আধুনিক ও উন্নত ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে আমরা নানাবিধ উদ্যোগ, কার্যক্রম ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।
‘এ ছাড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ঢাকা শহরের জন্য সমন্বিত মহাপরিকল্পনা, ২০২০-২০৫০।’
মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরে ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই হালনাগাদ ছাড়পত্র থাকতে হবে। বাণিজ্য অনুমতি নিয়ে তবেই বাণিজ্য করতে হবে। ঢাকা শহরে ব্যবসা করতে হবে করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে। আগামী জুলাই থেকে এই বিষয়ে কঠোর হবে করপোরেশন। বেসরকারি যত বাজার আছে সব করপোরেশনের আওতায় আনা হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক ঠিক করা হবে কতটি বাজার হবে।’
তাপস বলেন, ‘ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য ও উন্নত করার জন্য রাত ৮টার মধ্যে সব দোকান, বাজার, মার্কেট বন্ধ করতে হবে। খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। নগরের উন্নতির জন্য সব কার্যক্রম সূচির মধ্যে আনতে হবে। ওষুধসহ জীবন রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমতি নিয়ে তার প্রয়োজন মতো চলবে।
‘অনেক রাত পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকায় পরিষ্কার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। সময়ের মধ্যে আনতে পারলে যানজট কমে আসবে। এ ছাড়া শহরের মানুষের হাঁটার পথ উন্মুক্ত করতে হকারমুক্ত ফুটপাথ গড়ে তোলা হবে। আগামী অর্থবছর থেকে এই কাজ করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু এলাকায় লাল চিহ্ন দেয়া হবে যেখানে হকার বসতে পারবে না, কিছু স্থানে হলুদ চিহ্ন থাকবে যেখানে নির্দিষ্ট সময়ে বসতে পারবে, আর কিছু জায়গায় সবুজ চিহ্ন থাকবে যেখানে হকারদের বসার জন্য নিদিষ্ট স্থান হবে। আমি চাই এটি যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর হোক।’
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সমন্বয়হীন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আমরা অনেকাংশেই কমিয়ে আনতে পেরেছি। অনেকে অনুমতি চেয়েছে রাস্তা খোঁড়ার। কিন্তু আমরা বর্ষার আগে কোথায় খুঁড়তে অনুমোদন দেয়নি। আমরা বলেছি সেপ্টেম্বরের আগে কোনো রাস্তা খুঁড়তে দেয়া হবে না।’
মেয়র শেখ তাপস বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন খাল উদ্ধার করে তা সংস্করণ করছি। খাল হাতে পাওয়া পর গতবছর কম সময় পাওয়া গেছে। এ বছরে জলাবদ্ধতা দূর করতে কাজ করছি। গত বছর আমরা এক ঘণ্টায় জলাবদ্ধতা দূর করেছি, আগামী বছর থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে জলাবদ্ধতা দূর করার অঙ্গিকার করছি। এসব বিষয়ে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে।
‘আর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন জায়গা দখল করা ছিল, সেগুলো উদ্ধার করে খেলার মাঠ করা হয়েছে। ধূপখোলা খেলার মাঠকে আন্তর্জাতিক মানের একটি খেলার মাঠ হিসেবে আমরা নির্মাণ করছি। ৮০ বছরের পুরনো জমিও আমরা দখলমুক্ত করেছি।’
শব্দ ও বায়ু দূষণ নিয়ে মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরে যানবাহনে যে তেল ব্যবহার হয় তার ৮০ ভাগ নিম্নমানের। ফলে এগুলোর ধোঁয়া, ইটের ভাটা, কলকারখানার ধোঁয়ার কারণে হয় বায়ু দূষণ হয়। এসব বিষয়ে কিছুটা কাজ হয়েছে। সবাইকে একটা নিয়মের আওতায় আনলে ঠিক হবে। আমরা নগর পরিবহন শুরু করেছি। নগর পরিবহনে ৩টি যাত্রাপথ শুরু হবে খুব শীঘ্রই।
‘এ ছাড়া ২৫০টি বাস যুক্ত হবে। শহর পরিচালনা অত্যন্ত দুরুহ কাজ। ঢাকা শহরের যে মানুষ আছে, সে ধারণক্ষমতা ঢাকার নেই। তবুও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা ৪০ কোটি টাকা পেত বর্জ্য অপসারণের জন্য, কিন্তু সিটি করপোরেশন তা পায়নি, নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করা হচ্ছে। অনেক রিকশাভ্যান আছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। একটা প্রতিবন্ধীর কাছে আমি কখনো যানবাহন দিতে পারি না, তিনি প্রতিবন্ধী, রিকশা চালাবেন কীভাবে! প্রধানমন্ত্রী ভাতা দিচ্ছেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন, তারা সেগুলো নিয়ে থাকবে।’
দুই বছর সময়েই নিজের সফলতা পরিমাপ করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। বলেন, ‘সফলতা নির্ধারণ করার জন্য দুই বছর যথার্থ সময় না, তবুও আমরা মৌলিক বিষয়গুলোর উন্নয়ন সমন্বয় করেছি, সফল করেছি। দুই বছরে আমরা সফলতার ভিত্তি স্থাপন করতে পেরেছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদসহ কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।