জড়াজড়ি করে আছে দুটি বোয়াল। তবে মাছের আড়ত কিংবা মৎস্যজীবীর জালে নয়; বোয়াল দুটি জড়াজড়ি করে আছে বাজারের মোড়ে- ভাস্কর্যে!
এই মোড়ের নাম বোয়াল চত্বর। আর এলাকার নাম কারেন্টের বাজার। সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার এই বাজারের মোড়ে সম্প্রতি নির্মিত হয়েছে বোয়াল মাছের ভাস্কর্যটি।
সুনামগঞ্জের হাওরের বোয়াল মাছের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। খ্যাতি থেকেই বোয়ালের এই ভাস্কর্য। কিন্তু বোয়াল চত্বরের পাশের কারেন্টের বাজারে ঢুকে কোনো বোয়াল মাছ পাওয়া গেল না। আরেকটু এগিয়ে গেলেই বিশ্বম্ভরপুর বাজার, সেখানেও নেই বোয়াল মাছ। এমনকি টাঙ্গুয়ার হাওরঘেরা তাহিরপুর বাজারেও নেই হাওরের কোনো মাছ!
বোয়াল চত্বরে আছে শুধু পাঙ্গাস মাছ। ছবি: নিউজবাংলা
এই সবকটি বাজার ঘুরেই দেখা গেছে, খামারের মাছের আধিক্য। বিশেষত, গরিবের আমিষের উৎস হিসেবে খ্যাত পাঙাশ মাছের ছড়াছড়ি সবখানে।
মিঠাপানির মাছের অন্যতম উৎস হিসেবে খ্যাত হাওর। অথচ হাওর এলাকার বাজারেই খামারের মাছের আধিক্য কেন- এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, হাওরের ধানই আসলে মাছের জন্য কাল হয়েছে। বন্যার হাত থেকে ধান বাঁচাতে হাওরের যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ, অবাধে কীটনাশক ব্যবহার, পোনা নিধন, সেচ দিয়ে মাছ ধরাসহ নানা কারণে কমছে হাওরের মাছ। ইতোমধ্যে হাওরের মাছের অনেক জাত বিলুপ্তও হয়ে গেছে।
হাওরে কেন খামারের মাছ
‘হাওরের পানি নাইরে, হেথায় নাইরে তাজা মাছ’- সিলেট ছেড়ে কলকাতায় থিতু হওয়ার আক্ষেপ নিয়ে লেখা গানে এমনটি বলেছিলেন গণসংগীতশিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস। কিন্তু হাওর এলাকায়ই এখন নেই হাওরের মাছ।
দেশের অন্যতম বৃহৎ হাওর টাঙ্গুয়া। এই হাওর ঘেঁষেই তাহিরপুর বাজার। গত ২৭ এপ্রিল বিকেলে তাহিরপুর বাজারে প্রবেশের আগ মুহূর্তেই দেখা যায়, হাতে মাছ ঝুলিয়ে বাজার থেকে ফিরছেন নানা বয়সের লোক। প্রায় সবার হাতেই একই মাছ- পাঙাশ। বাজারে ঢুকেও দেখা যায় এখানকার প্রায় সব বিক্রেতার কাছেই চাষের মাছ। এর মধ্যে পাঙাশই বেশি। এ ছাড়া চাষের তেলাপিয়া, পাবদা, কৈও আছে কিছু। শুধু এক বিক্রেতাকে দেখা গেল, স্থানীয় বিল থেকে ধরে আনা কিছু ছোট মাছ নিয়ে বসেছেন।
এই বাজারেই মাছ কিনতে আসা এরশাদুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখন তো হাওরে মাছই পাওয়া যায় না। আগে আমরা কী বড় বড় মাছ দেখতাম। জালে ধরা পড়ত বিশাল একেকটা বোয়াল। এখানকার বাচ্চাকাচ্চারা এগুলো মনে করে গল্প।’
আক্ষেপের সুরে তিনি আরও বলেন, ‘কী দিন আইল, মাছের দেশের মানুষেরও খামারের মাছ খাইতে হয়। এসব মাছে কোনো স্বাদ নাই।’
তবে এই মৌসুমে বাজারে হাওরের মাছ এমনিতেই কম থাকে বলে জানান মাছ বিক্রেতা রবীন্দ্র দাস। তিনি বলেন, ‘এখন নয়া (নতুন) পানি আইতেছে। হাওরে এখন মাছ ঢুকব। বর্ষার পর এইগুলা ধরা অইব।’
পাঙাশ মাছ দামে কম হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে এর চাহিদা রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। ছবি: নিউজবাংলা
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাধানগর বাজারে গিয়েও দেখা যায়, সড়কের ধারে বসে পাঙাশ মাছ বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘পাঙাশ দামে সস্তা। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই গরিব। তারা দামি মাছ কিনতে পারে না। তাই পাঙাশ মাছই বেশি আনি।’
পরদিন ২৮ এপ্রিল দিরাই বাজারে গিয়েও দেখা যায়, চাষের মাছের ছড়াছড়ি। কিছু রুই, মৃগেল, গ্রাসকার্পও আছে এই বাজারে। তবে এগুলো সুনামগঞ্জের বাইরে থেকে আনা।
এখানকার মাছ বিক্রেতা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘হাওরে তো এখন মাছ পাওয়া যায় না। তাই চাষের মাছই ভরসা।’
মাছ কিনতে আসা চেরাগ মিয়া বলেন, ‘এই সময়ে হাওরে মাছ পাওয়া যায় না। কারণ শুষ্ক মৌসুমে হাওরের বিল শুকিয়ে সব মাছ ধরে ফেলা হয়। এখন নতুন পানির সঙ্গে নতুন মাছ আসবে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে আবার সেগুলো ধরা হবে। ফলে এই সিজনে বাজারে হাওরের মাছ পাওয়া যায় না।’
বিল শুকিয়ে মাছ ধরার কারণেই হাওরের মাছের উৎপাদন ও বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে, দাবি করেছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশ বায়োলজি ও জেনেটিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘শুষ্ক মৌসুমে বিলগুলো একেবারে শুকিয়ে মাছ ধরা হয়। এটা খুবই ক্ষতিকর। এতে অনেক জাত হারিয়ে যায়। এটা নিষিদ্ধও। তবু কেউ তা মানছে না।’
ধানের জন্যে মাছের ক্ষতি!
জামালগঞ্জের হালির হাওরের একটি বিল কয়েক বছর ধরে ইজারা নিচ্ছে স্থানীয় একটি মৎস্যজীবী সমিতি। এই সমিতির সদস্য তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘বিল ইজারা নিয়ে লাভের চেয়ে এখন লোকসানই বেশি গুনতে হয়। হাওরের ধান বাঁচাতে বিলে সবদিকে বাঁধ দেয়া হয়। এই বাঁধের কারণে মাছ ঢুকতে পারে না। যেগুলো আছে সেগুলোও চলাচল করতে পারে না। ফলে শুষ্ক মৌসুম বিল সিচেও তেমন মাছ পাওয়া যায় না।’
হাওর এলাকায় বছরে একবারই ধান হয়। স্থানীয়দের কাছে ‘বৈশাখী’ হিসেবে পরিচিত বোরো ধানই তাদের খাদ্যের প্রধানতম উৎস। প্রায় প্রতি বছরই মার্চের দিকে ঢল আর ভারি বৃষ্টিতে হাওর এলাকায় অকাল বন্যা দেখা দেয়। এতে তলিয়ে যায় ফসল। এই ধান রক্ষায় হাওরে যেন ঢলের পানি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।
এ বছরও সুনামগঞ্জে ১২৪ কোটি টাকা ব্যয় করে ৫৩২ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
টাঙ্গুয়ার হাওর তীরবর্তী তাহিরপুর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন মনে করেন, ধান রক্ষায় নির্মাণ করা এসব বাঁধই হাওরের মাছের জন্য বড় বাধা। তিনি বলেন, ‘দিন দিন বাঁধ উঁচু হচ্ছে। এতে ধান হয়তো রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু সময়মতো পানি হাওরে ঢুকতে পারছে না। এতে মাছও আসছে না। মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাঁধের কারণে মাছ ইচ্ছামতো পানিতে ঘুরে বেড়াতে পারছে না। এ কারণে হাওরের মাছ কমে যাচ্ছে।’
হাওরে এখন মাছ পাওয়া যায় না তাই চাষের মাছই ভরসা। ছবি: নিউজবাংলা
এদিকে রোগবালাই থেকে রক্ষার জন্য ধানগাছে কীটনাশক প্রয়োগ করেন কৃষকরা। বৃষ্টি আর বন্যায় এই কীটনাশক গিয়ে মিশে হাওরের পানিতে। অতিমাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগেও হাওরের মাছের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে মৎস্য কর্মকর্তা সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘কীটনাশকের কারণে মাছ ডিম কম দিচ্ছে। সব ডিম থেকে পোনাও ফুটছে না। অনেক সময় হাওরে মাছ মরে ভেসে উঠতেও দেখা যায়।’
এ ছাড়া রামসার সাইট (মাছের অভয়াশ্রম) হিসেবে ঘোষণার পর টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে মাছ ধরা বন্ধ থাকা, সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়া, হাওরে সময়মতো পানি না আসা আর অবাধে মাছ শিকারের কারণেও হাওরের মাছ এখন কম পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণকে হাওরের মাছ কমে যাওয়ার বড় কারণ বলে মনে করেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় কুণ্ডও।
এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মুক্ত জলাশয়ের মাছের জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন চলাচল খুব জরুরি। এটি বাধাগ্রস্ত হলে মাছের প্রজনন ব্যাপকভাবে কমে যায়। হাওরে এটা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীর মাছ আগে হাওর ও বিলে গিয়ে আশ্রয় নিতো। এখন বাঁধের কারণে মাছ নদী থেকে হাওর বা বিলে যেতে পারছে না।’
এ প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের উপপরিচালক বলেন, ‘ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। স্বাভাবিকভাবেই সরকার ধান রক্ষায় অধিক মনোযোগ দেবে। তবে কীটনাশক ব্যবহারে আমরা সব সময়ই কৃষকদের নিরুৎসাহিত করি।’
তবে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায় মনে করেন, ধান ও মাছ দুটির ব্যাপারেই সরকারের মনোযোগী হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকৃতির অনুকূলে কাজ করতে হবে। যে জায়গায় ধান হয় সেখানে ধান চাষ করতে হবে। আর যে জায়গায় ধান হয় না, অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় সেখানে ধান চাষ না করে মাছ চাষে মনোযোগী হতে হবে।’
এই গবেষক বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা খরচ করে আমরা বাঁধ দিচ্ছি ধান চাষের জন্য। কিন্তু ধান পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। এই টাকা মাছ চাষে খরচ করলে আরও অনেক বেশি টাকার মাছ পাওয়া যেত।’
তিনি বলেন, ‘আবার এসব বাঁধের মাটি বৃষ্টি আর পানির স্রোতে হাওর ও বিলে যাচ্ছে। এতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ মাটি জমছে হাওরে। ফলে বিলের পানি বেশি সময় থাকছে না। অদূর ভবিষ্যতে তো বিলগুলোই থাকবে না। সব সমতল ভূমি হয়ে যাবে! ফলে ধান ও মাছ দুটিরই ক্ষতি হবে।’
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল দাবি করেছেন, হাওরের মাছ কমলেও সুনামগঞ্জে মাছের উৎপাদন আগের চেয়ে বেড়েছে। কারণ মানুষজন মাছ চাষে আগ্রহী হয়েছে, মাছের খামার গড়ে তুলছে। সরকারও তাদের সহায়তা করছে।
তিনি জানান, মাছের উৎপাদন বাড়াতে এই এলাকায় এখন ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্য চাষে প্রযুক্তি সহায়তা সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কারণে মাছ চাষ বেড়েছে। কিন্তু চলতি বছরই এই দুই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পগুলোর মেয়াদ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।’
অবাধে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধন
‘আজই আপনি সিলেটের যে কোনো বাজারে যান, দেখবেন- অবাধে বিক্রি হচ্ছে রেণু পোনা। প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এগুলো। কেউ বাধা দিচ্ছে না!’
হাওরের মাছ নিয়ে গবেষণা করা সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায়ের এই মন্তব্যটি যে যথার্থ, তা বোঝা গেল গত ২৯ এপ্রিল সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে। সব বাজারেই দেদার বিক্রি হচ্ছে রেনু পোনা। বৈশাখের নতুন পানির সঙ্গে নদী ও হাওরে প্রবেশ করেছিল এই পোনাগুলো। জেলেরা এগুলো অবাধে শিকার করে বাজারে আনছে।
এ ক্ষেত্রে মানুষের মাঝে যে সচেতনতার অভাব, তা সাইফুল ইসলাম নামে এক কিশোরের বক্তব্যে স্পষ্ট। দেখার হাওরে ঠেলা-জাল দিয়ে পোনা মাছ ধরছিল সে।
সাইফুল বলে, ‘আমরা তো সব সময়ই এগুলো ধরি। জালে যা উঠে তাই-ই ধরি। কেউ কখনো মানা করেনি। তা ছাড়া মাছ না ধরলে খামু কি?’
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. নির্মল চন্দ্র রায় বলেন, ‘মাছের প্রজাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে ও উৎপাদন বাড়াতে অবশ্যই পোনা মাছ এবং ডিমওয়ালা মাছ নিধন বন্ধ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে ক্ষতিকর জালের ব্যবহারও। হাওর এলাকায় এসব কেউ মানছে না।’
শান্তিগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ ধরা বন্ধে জেলেদের সচেতন করতে তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
বিলুপ্ত অনেক প্রজাতি
সুনামগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন হাওর থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে প্রায় ৩২ প্রজাতির মাছ।
সিলেট মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে- হাকালুকি, টাঙ্গুয়া, দেখার হাওর, শনির হাওরসহ সিলেট বিভাগের হাওরগুলোতে এক যুগ আগেও প্রায় ১০৭ প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এর মধ্যে গত কয়েক বছরে বেশকিছু প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে আরও কিছু প্রজাতি।
বছর তিনেক আগে মৎস্য অধিদপ্তরের সহায়তায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপকূলীয় ও জলাভূমি প্রকল্প জরিপ নামে একটি জরিপ চালানো হয়। বেসরকারি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এনসিআরএস, আইডিয়া ও প্রচেষ্টা এই জরিপ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে।
বাজার জুড়ে পাঙ্গাস মাছে ছয়লাভ। ছবি: নিউজবাংলা
জরিপে দেখা গেছে, সিলেটের হাওরগুলোর ১০৭ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৩২ প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জরিপের ফলাফলে বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- মহাবিপন্ন, সঙ্কটাপন্ন ও বিপন্ন প্রজাতি।
এর মধ্যে মহাবিপন্ন প্রজাতি মাছের মধ্যে রয়েছে- টাটকিনি, ঘারুয়া, বাঘাইড়, রিটা, রাণী, পাঙাশ, বামোশ, নাফতানি, চিতল, একথুটি ও চাকা।
সংকটাপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- বাচা, ছেপচেলা, ঢেলা, বাঁশপাতা, কুঁচে, নাপতে কই, বাতাসিয়া টেংরা, ফলি ও গুজিআইড়।
আর বিপন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে- গুলশা, গনিয়া, দাড়কিনা, আইড়, পাবদা, বড় বাইম, গজার, তারাবাইম, তিতপুঁটি, নামা চান্দা ও কালিবাউশ।
এ বিষয়ে আইডিয়ার নির্বাহী পরিচালক নজমুল হক বলেন, ‘হাওরের মাছের বিলুপ্তি রোধ ও বিস্তারে অসময়ে পোনা মাছ ধরা বন্ধসহ ডিম ছাড়ার মৌসুম বৈশাখ থেকে শ্রাবণ মাস পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিল শুকিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা ও মৎস্য আইন সম্পর্কেও মৎস্যজীবীদের সচেতন করতে হবে। এ ছাড়া হাওরের যত্রতত্র বাঁধ ও সড়ক নির্মাণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। কমাতে হবে কীটনাশকের ব্যবহারও।’
সুনামগঞ্জে মাছের উৎপাদন কত
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত অর্থ বছরে এই জেলা থেকে ৯০ হাজার ১৩০.২৫ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নদী থেকে ৪ হাজার ৫৪৪.৪৫ মেট্রিক টন, বিল থেকে প্রাকৃতিকভাবে ২৮,৬২৪.৩৯ মেট্রিক টন, বিলে পোনা অবমুক্তের মাধ্যমে ৬০.৯০ মেট্রিক টন, হাওর থেকে ৩৪ হাজার ১৩৪.০৭ মেট্রিক টন এবং প্লাবনভূমি থেকে ২৭১৫.২৫ মেট্রিক টন মাছ পাওয়া যায়।
ওই কার্যালয় আরও জানায়, জেলায় ৩ হাজার ১৭০ হেক্টর জায়গাজুড়ে ২০ হাজার ৭৬৯টি মৎস্য খামার আছে। গত অর্থবছরে খামারগুলোতে উৎপাদন হয়েছে ১১ হাজার ৭৯৮.৮৫ মেট্রিক টন মাছ।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘মাছ আরও বেশি পাওয়া যায় আসলে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কর ফাঁকি দিতে অনেক সময় তথ্য গোপন করে।’