মাকে হারিয়ে অনবরত কাঁদছে ৯ বছরের ছেলেটি। প্রবাসী বাবার সঙ্গে মায়ের সম্পর্কের টানাপড়েন অনেকদিনের। মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতে বেড়ে উঠছিল সে। এখন সেই মাও পৃথিবী ছেড়েছেন।
ছোট্ট ছেলেটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় নানা-নানি। একদিকে মেয়ে হারানোর শোক, অন্য দিকে নাতিকে দুশ্চিন্তা, সব মিলিয়ে দিশেহারা তারা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মেয়েটির মৃত্যু হয়। তার প্রেমিক আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
মারা যাওয়া তরুণী ও চিকিৎসাধীন তরুণের পরিবার এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেয়েটির প্রেম মেনে না নিয়ে কিশোরী বয়সে তাকে অন্যত্র বিয়ে দেয়া হয়। তবে স্বামীর সঙ্গে দূরত্বের পাশাপাশি প্রেমিকের সঙ্গে তার আবার সম্পর্ক তৈরি হয়। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবার বাধা দিলে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন মেয়েটি। তার প্রেমিকও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
মেয়েটির বাবার বাড়ি দামুড়হুদা উপজেলার মজলিশপুর গ্রামে। সেখান শনিবার সকালে বিষপান করেন ২৫ বছর বয়সী সেই মেয়ে। সে খবর পেয়ে বিষপান করেন একই গ্রামের বাসিন্দা ও মেয়েটির প্রেমিক।
তরুণীর বাবা বলেন, ‘শনিবার সকালে আমি ও আমার স্ত্রী বরজে পান ভাঙতে যাই। পরে লোকমুখে শুনি আমার মেয়ে বিষ খেয়েছে। প্রতিবেশীরা বলেছে, বাড়ির ছাদে উঠে মোবাইল ফোনে কারও সঙ্গে ঝগড়া করছিল আমার মেয়ে। পরে বিষপান করে।
‘খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে ঝগড়া করতেন তার শাশুড়ি। চার বছর ধরে সে ছেলেকে নিয়ে আমাদের বাড়িতেই ছিল। এক বছর আগে তার স্বামী তাকে মৌখিক তালাক দিয়েছে। আমার তিন মেয়ে ও এক ছেলে। সে ছিল মেজো। আমার মেয়েকে কোনোদিন আমরা কষ্ট দিইনি।’
স্থানীয়রা জানান, স্কুলে পড়ার সময় মজলিশপুর গ্রামের মসজিদপাড়ার এক ছেলের সঙ্গে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে সেটি না মেনে মেয়ের পরিবার ২০১২ সালের দিকে গাংনী উপজেলার জালশুকা গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে দেয়।
বিয়ের পর মেয়েটির স্বামী কাতারে চলে যান। এরপর থেকে মেয়েটি বেশিরভাগ সময় বাবার বাড়িতেই থাকতেন। তবে প্রেমিকের সঙ্গে তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়নি।
মেয়ের পরিবারের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্য জানান, দুজনের সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানি হলে মেয়েটিকে সাবধান করা হয়। তবুও তিনি কথা শোনেননি। এটা নিয়ে বকাবকি করা হলে শনিবার সকালে বিষ খান তিনি।
তবে মেয়ের মায়ের দাবি, প্রেমের সম্পর্ক এখনও চলছিল বলে তাদের জানা ছিল না।
তিনি বলেন, ‘গ্রামের এক ছেলের সঙ্গে হাইস্কুলে পড়ার সময় আমার মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল, কিন্তু তখন আমরা বিষয়টি বুঝতে পারিনি। মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে দেখে সেই সময় তাকে বিয়ে দিয়ে দিই।
‘শ্বশুর বাড়ি থেকে আমার বাড়ি আসার পর গ্রামের সেই ছেলের সঙ্গে গোপনে আবার আমার মেয়ের সম্পর্ক হয়। বিষপানের পর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। তারা দুজনেই একসঙ্গে বিষপান করেছে। এখন তার ছোট্ট বাচ্চাটার কী হবে?’
বিষপানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছেলেটির বাবা জানান, সকালে ছেলে মাঠে যান। সেখানে বাবলা গাছের নিচে বসে বিষপান করেন। পরে তাকে ফোন করে বলেন, ‘আব্বা আমি একটা ভুল কাজ করে ফেলেছি। আমি বিষ খেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘তাকে বারবার নিষেধ করা হলেও মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেনি। মেয়েটির বিষ খাওয়ার খবর পেয়ে সে নিজেও বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার অবস্থাও ভালো না। সকালে রক্তবমি করেছে।’
সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক হাসনাত পারভেজ শুভ বলেন, ‘দুজনের পাকস্থলি ওয়াশ করা হয়েছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে হাসপাতালে ভর্তি রেখে পর্যবেক্ষণ করাও হচ্ছিল। পরে রাতে চিকিৎসাধীন মেয়েটি মারা যায়।’
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আর তরুণীর মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।