মাঠ জুড়ে পাকা সোনালী ধান। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে সে ধান তোলায় দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিশেষ করে নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ায় শ্রমিক সংকটে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
শ্রমিক সংকটের পাশাপাশি এক দিনে একজন শ্রমিককে মজুরি হিসেবে দিতে হচ্ছে হাজার টাকা। যা এক মণ ধানের দামের সমান। শ্রমিক সংকট আর মজুরি বেশি হওয়ায় দিশেহারা কৃষক।
উপজেলার চকসিংড়া, শোলাকুড়া, বালুয়া-বাসুয়া, শেরকোল, নিংগইন, রাখালগাছা, তাজপুর, চৌগ্রাম, জামতলী, সাঁতপুকুরিয়া এলাকায় শ্রমিক সংকটে ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে।
কোথাও কোথাও শ্রমিক মিললেও দিনব্যাপী কাজ করতে তাদের হাজার টাকার বেশি দিতে হচ্ছে। তাই ধান তুলতে খরচ বেশি পড়ছে বলে জানান চাষিরা।
সিংড়ার কৃষক আবু জাফর বলেন, ‘বোরো ধান যখন ফুলে বের হয়েছে, তখনই কালবৈশাখী ঝড়ে গাছ নুয়ে মাটিতে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিদের খরচের টাকাও উঠবে না। তা ছাড়া, শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটা যাচ্ছে না। জমিতে বৃষ্টির পানি জমে থাকায় শ্রমিকেরা ধান কেটে দিতে চাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম ভালো, তবে সময়মতো মাঠ থেকে ধান তুলতে পারব কি না, সেটিই দুশ্চিন্তায় আছি। মাঠের অধিকাংশ ধান পেকে যাওয়ায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। এ এলাকায় ১১০০ টাকা মণ ধান। শ্রমিকের মজুরি বাবদ অনেক বেশি খরচ পড়ছে। গত কয়েকদিন এক হাজার থেকে ১১০০ টাকা দিন হাজিরায় শ্রমিকরা কাজ করেছে। এখন জনপ্রতি শ্রমিকদের ৭০০ টাকা বা বেশিও দিতে হচ্ছে।’
চকসিংড়া মহল্লার কৃষক আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘ধান কাটার পরে বৃষ্টির কারণে শ্রমিকরা চলে গেছে। ধান বহন করার জন্য ৫ দিন শ্রমিক খোঁজার পরে গতকাল শনিবার জনপ্রতি এক হাজার টাকা মজুরিতে শ্রমিক পেয়েছি। তবে বৃষ্টিতে ভিজে ধানের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। রোববার কিছুটা কমে ৭০০ টাকা দিন হাজিরায় শ্রমিক পেয়েছি।’
কতুয়াবাড়ি এলাকার কৃষক সাজু আহমেদ বলেন, ‘ধান কাটার কাজের জন্য অনেক খুঁজে ১১০০ টাকা দিনে শ্রমিক পেয়েছি। হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, এক মণ ধানের দামে একজন শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। আবাদে খরচ অনেক বেশি, সে তুলনায় ফলন কম। এ বছর অনেক লোকসান হবে।’
মজুরি বেশি নেয়ার বিষয়ে চকসিংড়ার কৃষি শ্রমিক বেলাল শেখ বলেন, ‘বাজারে দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে তো মজুরি বেশি নিতেই হবে। যে টাকা পাই, তা দিয়ে চাল, ডাল, তেল কিনতেই শেষ। চালের দাম বেশি। তেল, মাছ, মাংসের দামও বেশি।’
একই এলাকার আরেকজন শ্রমিক আব্দুল মজিদ জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটার কাজ করে থাকেন। এর আগে যে মজুরি পেতেন, তা দিয়ে সংসার চালানোর পরও ভবিষ্যতের জন্য কিছু রাখতেন। এখন যা পান তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাছাড়া ঝড় বৃষ্টিতে ধানগাছ নুয়ে পড়ায় তা কাটতেও কষ্ট হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সেলিম রেজা বলেন, ‘এ বছর সিংড়া অধ্যুষিত চলনবিলে বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৩০০ হেক্টর, তা অর্জিত হয়েছে। কয়েক দফা ঝড় আর বৃষ্টিতে মাঠের বেশিরভাগ ধান গাছ নুয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত অর্ধেক জমির ধান কাটা হয়েছে।
‘এ বছর শ্রমিক সংকট থাকায় ধান কাটার মজুরি কিছুটা বেশি। প্রথম দিকে এক হাজার টাকা মজুরি হলেও এখন ৭০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে।’
ধীরে ধীরে শ্রমিক সংকট কেটে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।