বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যেভাবে কৃষিকাজে ভাইরাল অধ্যাপক প্রিন্স

  •    
  • ১৫ মে, ২০২২ ১৬:৫২

কৃষি উদ্যোক্তা প্রিন্স বলেন, ‘নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যপণ্য বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই খামার গড়ে তুলেছি৷ বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কেঁচো ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়। ফল গাছে পোকা-মাকড় নিধনে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাপ বা ফাঁদ।’

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের বাবুলের বাজারে খামারে উৎপাদিত কচুর লতি বিক্রি করতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে। অধ্যাপকের এমন কাজ দেখে আপ্লুত হন ক্রেতা-বিক্রেতারা৷

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাৎক্ষণিক ছড়িয়ে পড়ে সেই দৃশ্য। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ তার প্রশংসায় ঝড় তোলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষকের নাম আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স। বরিশাল ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও মার্কেটিং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি কৃষিকাজের প্রতি তার ব্যাপক আগ্রহ সবাইকে অভিভূত করেছে।

কারণ, বাপ-দাদার আদি পেশা কৃষিকাজ ছেড়ে চাকরির পেছনে ছুটছেন অনেকে। শিক্ষিত যুবাদের অনেকে মনেরমতো চাকরি না পেয়ে কৃষিকাজ করতে দ্বিধায় পড়ে যান৷ তবে চাকরির পাশাপাশি কৃষিকাজে হয়েছেন সফল, তাদের মধ্যে একজন আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স।

তিনি জানান, ছোটবেলায় ঢাকায় থাকাকালীন আর্মি কলোনিতে তার মা লাউগাছ লাগান আর হাঁস পালন করতেন। তখন থেকেই তার মনে কৃষির প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়৷

বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় আর্মি কলোনিতে থাকতেন প্রিন্স। ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এরপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি ব্যবসায় এমবিএ করেন ২০০৮ সালে।

২০১৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও ২০১৮ সালে পিএইচডি করেন। বর্তমানে নিজেকে শিক্ষকতায় নিয়োজিত রেখেছেন।

বরিশালের ঝালকাঠির রাজাপুরে প্রিন্সের দাদার বাড়ি। বিয়ে করেছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার রাঙামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট গ্রামে৷ সেখানেই ৮ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন বিশাল কৃষি খামার। বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য চাষ করেন এখানে।

সরেজমিনে প্রিন্সের ‘কিষান সমন্বিত কৃষি উদ্যোগ’ খামারে গিয়ে দেখা যায়, তিন প্রজাতির ড্রাগন ফলের পাঁচ হাজার গাছ। রয়েছে মাহালিশা, কিউজাই, ব্রুনাই কিং, বাউ-৪, কাঁচামিঠা, তাইওয়া গ্রিন, কাটিমন, পালমার, মল্লিকাসহ ১০ প্রজাতির আমগাছ। গাছে ঝুলছে চায়না থ্রি, মঙ্গলবারিসহ তিন প্রজাতির লিচু।

এ ছাড়া মিসরীয় শরিফা, স্ট্রবেরি, চেরি, থাই পেয়ারা, আম, লেবু, জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা, সফেদা, আতাফল, কদবেল, আমলকী, ডেউয়া, ডুমুর, কাঠবাদাম, জামরুল, থাই জাম্বুরা, লটকন, মাল্টা ও কলাসহ বিভিন্ন ফলের গাছ সারিবদ্ধভাবে লাগানো। ফুল গাছে ফুটেছে নানা রংবেরঙের ফুল।

বাগানের ভেতরে ৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুরে তিনি চাষ করছেন দেশি প্রজাতির মাছ। পুকুরপাড়ে রাজহাঁস আর চীনা হাঁসের ছোট্ট একটি খামারও রয়েছে। পুকুরপাড়ে একটি শেডে কিছু গবাদিপশুও লালন-পালন করছেন তিনি। এর পাশেই তিনি করেছেন ধানের ক্ষেত৷

এ কৃষি খামারে উৎপাদিত পণ্য বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়। এ কাজে সহায়তা করেন কয়েকজন শ্রমিক। এর মধ্যে শ্রমিক সংকট দেখা দিলে স্থানীয় বাজারে গিয়ে নিজেই পণ্য নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন তিনি৷ কৃষির প্রতি তার এমন ভালোবাসা ভাইরাল হয়েছে মুহূর্তে।

কৃষি উদ্যোক্তা আবু বকর সিদ্দিক প্রিন্স নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যপণ্য বাজারে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যেই খামার গড়ে তুলেছি৷ বাগানে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে কেঁচো ও জৈব সার ব্যবহার করা হয়। ফল গাছে পোকামাকড় নিধনে ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন ধরনের ট্র্যাপ বা ফাঁদ।’

প্রিন্স জানান, কৃষিতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে ২০০৬ সাল থেকে জমি কিনতে শুরু করি। ২০১৪ সাল থেকে কৃষি খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর থেকে এক সেমিস্টার পর্যন্ত (ছয় মাস) ক্লাস নেই এবং এক সেমিস্টার (ছয় মাস) ছুটি কাটিয়ে এ সময়টুকু খামারে ব্যয় করেন।

ঈদের পর থেকে শ্রমিকরা ছুটিতে থাকায় স্থানীয় বাজারে ১৬ কেজি কচুর লতি নিয়ে যান তিনি। পাইকার বলেছিল ৪০ টাকা। কিন্তু বাজারে বসে প্রতি কেজি ৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই মানুষ। কে কোন পর্যায়ে আছি সেটা বড় বিষয় নয়। এ ছাড়া নিজের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।’

প্রিন্স আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষিপ্রধান দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে জমির পরিমাণ ক্রমেই কমছে। এ পরিস্থিতিতে ছোট স্থানে বেশি উৎপাদন করতে না পারলে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। যেকোনো খামার করার আগে প্রশিক্ষণ গ্রহণ জরুরি।

‘কারণ প্রশিক্ষিত কৃষক সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারে। আধুনিক কৃষিকাজে মেধারও প্রয়োজন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমার এখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করেন। অনেক কৃষক ও বেকার যুবকরা পরামর্শের জন্য আসেন। কৃষিতে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে তাদের সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। আমি চাই, আমাকে দেখে দেশে অনেক কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হোক।’

এ বিভাগের আরো খবর