কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও ফুলবাড়ি উপজেলায় দুটি সরকারি বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবনে চলছে পাঠদান। যেকোনো সময় ভবন ভেঙে পড়ার আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সরেজমিনে দেখা যায়, রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের নাককাটি হাট বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান চলছে। ১৯৭২ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা হয়। আজও নতুন ভবন হয়নি। জরাজীর্ণ একতলা ভবনে গাদাগাদি করে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস করছে। ঝড়, বৃষ্টি বা ভূমিকম্পে যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার শঙ্কা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান বলে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে ক্লাস করতে ভীষণ ভয় লাগে। কখন যে ছাদ ভেঙে পড়ে এই আতঙ্কে থাকি। ছাদের পলেস্তারা ভেঙে ধুলাবালি চোখে ও শরীরে পড়ে। পড়াশোনা করতে খুব সমস্যা হয়।’অভিভাবক আতাউর রহমান বলেন, ‘স্কুলে সন্তান পাঠিয়ে ভয়ে থাকতে হয়। বাচ্চা ফেরত আসবে কি না? ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই আমাদের সন্তানরা ক্লাস করছে। অনেক অফিসার এসে দেখে যান। নতুন ভবন আর হয় না।’
নাককাটি হাট বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আননুন্নাহার বিউটি বলেন, ‘বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। পুরো ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটি কক্ষ বন্ধ করা হয়েছে। একটিতে কোনো রকমে ক্লাস চালু আছে আর অন্যটি অফিস রুম। স্কুলের ভবনের অবস্থা খুবই খারাপ। তারপরও আমরা পাঠদান করাচ্ছি। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের কারণে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।’
একই চিত্র ফুলবাড়ি উপজেলার জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভবনের। ১৯৩৪ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি ২০১৮ সালে সরকারি হয়। প্রাচীন একতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণি, শিক্ষক মিলনায়তন এবং ছাত্রী কমন রুমের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ছাদের ওপর পলিথিন বিছিয়ে কোনো রকমে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে জীর্ণ ভবনেই চলছে পাঠদান। এই স্কুলে ৮৫০ শিক্ষার্থী ও ৩৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। এই বিদ্যালয়েই এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র।
নবম শ্রেণির সোমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের স্কুলটি অনেক আগের। ছাত্র-ছাত্রীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ সংকট। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনেই ক্লাস করতে হচ্ছে। ক্লাস করার সময় পলেস্তারা খসে শরীরে পড়ে অনেকে আহত হয়েছে।’
সহকারী শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়টি জেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর ভবনগুলো ১৯৬০ সালে নির্মাণ হয়েছে। বাধ্য হয়েই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছেন।
প্রধান শিক্ষক আবেদ আলী খন্দকার জানান, পুরাতন জরাজীর্ণ ভবনের ছাদে পলিথিন বিছিয়ে কোনো রকমে স্কুলের পাঠদান অব্যাহত আছে।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, জেলার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হয়েছে। শিগগিরই নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। অন্য বিদ্যালয়গুলোতে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমোদন হলে সমস্যা কেটে যাবে।এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহজাহান আলী জানান, জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা না থাকলেও সরেজমিনে জছি মিঞা মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। বরাদ্দ এলেই নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে।