খামখেয়ালির কারণে অফিস করেন না বলে জানিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
শনিবার দুপুরে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে মহানগর পুলিশ আয়োজিত কমিউনিটি পুলিশিং সভায় তিনি এ কথা বলেন।
মেয়র বলেন, ‘আমি এসি গাড়িতে ঘুইরা মানুষের সেবা করি না। রাস্তায় হাইটা হাইটা মানুষের সেবা করি। অনেকে বলে আমি অফিস করি না, বলতে পারেন এটা আমার খামখেয়ালি।
‘অফিসের লোকরা বলতে পারে আমাকে অফিসে পায় না, বরিশালের সাধারণ মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। প্রতিটি অলিগলিতে যান, প্রতিটি ভিখারির কাছে জিজ্ঞাসা করেন, প্রতিটি পাগলের কাছে জিজ্ঞাসা করেন।’
সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমার মুখ দিয়া কি আপনারা কোনো সময় শোনছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ কাকুর বিরুদ্ধে কোনো কথা, তার মুখ দিয়া শোনেছেন আমার বিরুদ্ধে? যদি না শুই না থাকেন তাইলে সমস্যা কোথায়।
‘কারা গ্যাপ তৈরি করতে চাইতেছে। কারা কাকে বিভক্ত করে? আমাগো মধ্যে যদি কোনো ঝামেলা থাহে সেটা ব্যক্তিগত। চাচা-ভাতিজার মধ্যে অভিমান, এটারে তো রাজনৈতিকভাবে দেহার সুযোগ নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাহিদ কাকুরে আমি এমনেই ভয় পাই। হে তো সেনাবাহিনীর লোক তাই। তারে দেখলেই ভয় লাগে আমার। এত বড় ঘটনা ঘটল ১৮ আগস্ট। আমি পেপার পত্রিকায় কিছু বলছি জাহিদ কাকুর বিরুদ্ধে? আমরা প্রথমে একসাথে কাজ করছি, এখনও করছি।
‘আমি তার নির্বাচনে কষ্ট করছি, আমার ব্যক্তিগত অভিমান থাকতে পারে। এটা আমার আর তার ব্যাপার। আমি নৌকার জন্য কাজ করছি, তিনি যদি আবার আসেন তাহলে আবার করব, তার থেকে খারাপ লোক এলে আরও বেশি কাজ করব নৌকার জন্য।’
মেয়র সাদিক বলেন, ‘১৮ আগস্টের মামলা উঠাইয়া ফেলা হইছে। কারও প্রতি আমার অভিযোগ নাই। আমার নেত্রী আছে, আমি আছি। আমি সঠিক পথে ছিলাম। আমাকে প্রধানমন্ত্রী কিছু জিজ্ঞাসা করে নাই। আমার বাবাকেও কিছু জিজ্ঞাসা করে নাই।
‘বাবা আমাকে বলছেন, তুমি যেভাবে কাজ করতেছিলা সেভাবে কাজ করে যাও। যার জন্য রাজনীতি করি সেই বুঝলেই হইছে, আর কিছু চাই না আমি। সাদিক আব্দুল্লাহ মুখ দিয়া যেটা বলে সেটা করে।
‘আমি মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি লেইখা দিছি। প্রধানমন্ত্রী একটা অক্ষর চেঞ্জ করে নাই। আর কি চাওয়া আছে বলেন।’
বরিশাল শহরে ছিনতাই, চাঁদাবাজি নেই উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ‘একটা ইট গাঁথতে কাউরে পয়সা দেয়া লাগে না। আপনাগো গায়েও তো অনেকের কোপের দাগ আছে। সেই বরিশাল কি আছে। শান্তিতে পরিণত হইছে বরিশাল শহর। এই শহরে রাজনীতি করছে মজিবর রহমান সরওয়ারের মতো সন্ত্রাসী লোক।
‘আমি ভোট চাইতে আপনাদের কাছে যাব না, আপনারা যদি মনে করেন আমারে ভোট দেয়া প্রয়োজন তখন দিয়েন। আপনারাই ডাইকা নেবেন আমারে।’
সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল সদর আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখ। প্রধান বক্তা ছিলেন বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান।
গত বছরের ১৮ আগস্ট রাতে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুখের ব্যানার খোলাকে কেন্দ্র করে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও মেয়র সাদিকপন্থি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের বাগবিতণ্ডা হয়।
একপর্যায়ে ইউএনওর বাসভবনে হামলাচেষ্টার অভিযোগে আনসার সদস্যরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে গুলি ছুড়লে মেয়র সাদিকসহ ৩০ নেতাকর্মী আহত হন। পর পরই সাদিকপন্থি নেতাকর্মীরা ইউএনও কার্যালয়ের সামনে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
পরে পুলিশ ও ইউএনওর করা মামলায় মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহসহ ৬০০ জনকে আসামি করা হয়।