ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে কয়েক দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে চুয়াডাঙ্গায়। বৃষ্টিতে ডুবে গেছে বোরো ক্ষেত।
এতে পানিতে পচে নষ্ট হচ্ছে জমিতে কেটে রাখা ধান। আবার সেই ধান শুকনো জায়গায় এনে রাখলেও গজিয়ে যাচ্ছে চারা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রমিক সংকট। শ্রমিক পাওয়া গেলে তাদের দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত মজুরি।
ধান নিয়ে নানা দিক থেকে সংকটে জর্জরিত কৃষকরা। কেউ কেউ শ্রমিক না পেয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়েই ধান কাটছেন।
চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার সকালে সূর্যের দেখা মিললেও দুপুরের পর শুরু হয় বৃষ্টি। শনিবারও আকাশ মেঘাচ্ছন্ন।
এর মাঝে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হাঁটু পানিতে নেমে ধান কাটছেন কৃষকরা। কেউ কেউ কেটে রাখা ধান পানি থেকে উঠিয়ে উঁচু কোথাও রাখছেন। অনেকে ভাসমান বিচুলি আঁটি করছেন। ভেজা ধানই মাড়াই চলছে কোথাও কোথাও।
দামুড়হুদা উপজেলার হোগলডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মামুন হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে এক বিগি (বিঘা) ধান ঘরে তুলতি খরচ হতু পাঁচ থেকে ছয় হাজার টেকা। একুন পানির কারণে খরচ অনেক বেড়ি গিয়িচে। শুদু এক বিগি জমির ধান কাটতিই লাগচি ছয় হাজার টেকা।
‘জমিতে পানি থাকায় গরুর গাড়িতে করি ধান বাড়ি আনতি হচ্চি। গাড়ি ভাড়া দিতি হচ্চি ছয় হাজার টেকা। ধান ঝাড়তি একুনু খরচ লাগবি তিন হাজার টেকা।’
কার্পাসডাঙ্গা গ্রামের চাষি সমেল উদ্দিন বলেন, ‘পাকা ধান পানির নিচে তলি রয়িচে। ধান পচি যাচ্চে। আবার ধান থেকি কল (চারা) বেরি পড়িচে। ধান কাটার জন্যি কোনো মুনিস (শ্রমিক) পাওয়া যাচ্চি না। ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দিয়িও মুনিস পাওয়া যাচ্চি না। তাই বউ আর ছেলিকে নিয়ি ধান কেটি বাড়ি নিয়ি যাচ্চি।’
জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ গ্রামের গোলাম হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার পর পানি শুরু হলু (হলো)। তিন বিগি জমির ধান একুনও ঘরে তুলতি পারিনি। পানির কারণে সব শেষ হয়ি গেল।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ১১ মে পর্যন্ত ৩১ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘আসানির প্রভাবে বৃষ্টির কারণে অন্তত ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির ধান ক্ষতির মুখে পড়েছে। বৃষ্টির কারণে কৃষকরা ৭০ ভাগ জমির ধান আগেই কেটে ঘরে তুলেছেন। বাকিরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।’