নরসিংদীতে এবার বেগুনের ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তবে বাজারে এখন এ সবজির যে পরিমাণ চাহিদা, ফলন হয়েছে তার চেয়ে কিছুটা কম। এতে চাহিদার তুলনায় যোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাষিদের।
প্রতি বছর এই মৌসুমে দিনে ১০ থেকে ১৫ টন বেগুন কিনে থাকেন পাইকাররা। দাম বেশি ও আবাদ কমে যাওয়ায় এবার তা দাঁড়িয়েছে ৩ থেকে ৫ টনে।
এ বিষয়ে নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, নরসিংদীতে শিবপুর, বেলাব ও রায়পুরা উপজেলায় সবজি চাষাবাদ ভালো হয়। এবার অন্যান্য ফসলের মধ্যে এ জেলায় বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে।
সরেজমিনে এ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দেখা যায়, বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে। চাষিরা গাছ থেকে ছাটাই করে বেগুন মজুত করছেন রাস্তার পাশে। স্থানীয় পাইকাররা ছোট, বড়, মাঝারিসহ প্রায় ১২ ইঞ্চি লম্বা বেগুন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি কিনছেন।
রাজধানীর কাওরান বাজার, মিরপুর, সাভার ও পুরান ঢাকায় নরসিংদীর বেগুন ৭০ টাকা কেজি ধরে পাল্লা হিসেবে বিক্রি করছেন পাইকাররা।
রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগরের বড়চর গ্রামের বেগুনচাষি কাকন মিয়া জানান, এবার বেগুনের চাহিদা অনেক, তবে চাষি কম। যে চাষিরা বেগুন চাষ করেছে তাদের সবার ফলনই ভালো হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তারা পোকা দমনে চাষিদের পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘কৃষি শ্রমিকদের মজুরি ও চাষাবাদে খরচ বেড়ে যাওয়ায় আবাদ কমে গেছে। শুক্রবার প্রায় এক বিঘা জমির বেগুন তুলে প্রতি মণ ২৫শ টাকা ধরে ৫ মণ বেগুন পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছি। আমরা পাইকারদের চাহিদার তুলনায় বেগুন দিতে পারছি না।’
শিবপুর উপজেলার বেগুনচাষি আজগর আলী নিউজবাংলাকে জানান, তিনি গত তিন বছর ধরে বেগুন চাষে তেমন লাভের মুখ দেখেননি। এবারও ঝুঁকি নিয়ে অল্প জমিতে বেগুন চাষ করছেন। এবার বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘৮০ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করে এ পর্যন্ত ৪ মণ বেগুন বিক্রি করা হয়েছে। বেগুন ক্ষেতের পোকার আক্রমণ ঠেকাতে বিষ দিতে হয়। আমরা বিষ দেয়া ছাড়াই বেগুন আবাদ করে তা বাজারের পাইকারদের দিচ্ছি।’
জেলার বিভিন্ন ক্ষেত থেকে পাইকারি বেগুন কিনে ঢাকায় বিক্রি করেন উত্তরবাখন নগর ইউনিয়নের বরচর গ্রামের আব্দুল খালেক মিয়ার ছেলে মধু মিয়া।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বেগুন কিনে রাজধানীর মিরপুর-১ ও নারায়ণগঞ্জ শহরে পাইকারি বিক্রি করেন। এবার বেগুন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। সব শেষ কৃষকদের কাছ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে কিনে ৭০ টাকা কেজি দরে ঢাকার আড়তদারদের কাছে বিক্রি করবেন তিনি। ঢাকা থেকে নরসিংদীর বাছাই করা বেগুন বিদেশও যাচ্ছে।
উপপরিচালক মো. ছাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, হালকা বেলে থেকে ভারি এটেল মাটিসহ প্রায় সব ধরনের মাটিতেই বেগুনের চাষ করা হয়। এটেল দো-আঁশ ও পলি দো-আঁশ মাটি বেগুন চাষের জন্য উপযোগী এবং এই মাটিতে বেগুনের ফলন বেশি হয়। জেলায় এবার এক হাজার ৬৮১ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রায়পুরা, বেলাব ও শিবপুরে বেগুন চাষ ভলো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘তিন ধরনের বেগুন আবাদ হয়ে থাকে নরসিংদীতে। এর মধ্যে লোকাল জাত হিসেবে ঘুষিঙ্গা লম্বা বেগুন, বোম্বাই, বাগলতি বেগুন চাষ করে থাকেন কৃষকরা। লম্বা বেগুনের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। আমরা বেশ কয়েকটি কৃষদের বেগুন ক্ষেত ঘুরে দেখেছি। এবার কয়েকটা কালবৈশাখী হলেও বেগুন চাষিদের ক্ষতির খবর পাইনি।’