অধরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন দখলে নিতে আওয়ামী লীগ যার ওপর আস্থা রেখেছে, তিনি জাতীয়ভাবে পরিচিত না হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে কোনো নতুন মুখ নন।
২০১২ ও ২০১৭ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরে যাওয়া আওয়ামী লীগের হয়ে আগামী ১৫ জুন ভোটে লড়বেন আরফানুল হক রিফাত।
তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
সত্তরের দশকে জিয়াউর রহমানের সেনা শাসনের সময় ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগ করার মাধ্যমে কুমিল্লার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন রিফাত। এর পর থেকে তিনি এই দলের কর্মী হিসেবেই কাজ করছেন।
মনোনয়ন পেয়ে ভীষণ খুশি রিফাত। তবে তার সামনে আওয়ামী লীগকে এক করার যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেটা তিনি কতটা পূরণ করতে পারবেন, সে বিষয়টির ওপরই নির্ভর করতে পারে, ভোটের ফল কী হবে।
নৌকা পাওয়া নেতা কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গত ১৩ এপ্রিল মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বাহারের সভাপতিত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় রিফাতকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীরা সমর্থন দেন।
গতবারের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার বাবা আফজল খান ছিলেন বাহারবিরোধী নেতা। একই দল করলেও এই দুজনের সাপে-নেউলে সম্পর্ক কুমিল্লা সদর আসন ও শহরের ভোটে বারবার ভুগিয়েছে আওয়ামী লীগকে।
নব্বইয়ের দশক থেকেই দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ বাহারকে বেছে নিলে আফজল স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আবার আফজলকে বেছে নিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বাহার।
বাহার সংসদ সদস্য হওয়ার পর আফজলকে সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে সমর্থন দেয়া হলেও তিনি দলের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পাননি বলে সে সময় গণমাধ্যমে এসেছিল। তার মৃত্যুর পর মেয়ে সীমাকে প্রার্থী করা হলে তিনিও আওয়ামী লীগের একটি অংশের সমর্থন পাননি বলে ভোট শেষে সমীকরণে উঠে আসে।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে জেতার পর বাহারের প্রভাব এমনিতেই বেশি। তার ওপর আফজল খানের মৃত্যুর কারণে তার ঘনিষ্ঠ ও অনুসারীরা এখন এমন কোনো নেতা পাননি, যাকে ঘিরে তারা চলবেন। এই অবস্থায় বাহার-ঘনিষ্ঠকে দিয়েই বাজিমাত করতে চাইছে ক্ষমতাসীন দল।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন মোট ১৪ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন গতবারের পরাজিত প্রার্থী সীমাও। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য। সিটি করপোরেশনে ভোট করতে তিনি এই পদ ছাড়তে প্রস্তুত ছিলেন।
গত কয়েকটি নির্বাচনে যা হয়নি, এবার তা হবে কি না অর্থাৎ আওয়ামী লীগের সব পক্ষ একাট্টা হয়ে ভোটে লড়তে পারবে কি না, এই প্রশ্ন প্রতিবারই ওঠে কুমিল্লায়।
এই প্রশ্নে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জহিরুল ইসলাম সেলিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দলের তৃণমূল কর্মীকে মনোনয়ন দিয়েছেন, সেখানে কেউ প্রকাশ্য গোপনে বিরুদ্ধাচরণ করবে বলে আমার মনে হয় না। এবার সিটি নির্বাচনটা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে উজ্জীবিত করবে।’
মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় রিফাত বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূলের কর্মীদের ত্যাগকে ভোলেন না। আমি আজ অত্যন্ত আনন্দিত। আমার নেতা কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে দলের প্রতি আনুগত্য থেকে কাজ করতে হয়। মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ। নির্বাচনে নৌকা মার্কার বিজয় সুনিশ্চিত।’
নিজের ঘনিষ্ঠজন নৌকা পাওয়ায় বাহারও উৎফুল্ল। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি হৃদয় নিংড়ানো কৃতজ্ঞতা। আর বেশি কিছু বলব না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেব।’
রিফাতের মনোনয়নের খবরে নগরীতে আওয়ামী লীগের বাহার অনুসারী নেতারা তাৎক্ষণিক আনন্দ মিছিল করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ে একত্রিত হন নেতাকর্মীরা।