কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন চলাকালে দলটির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে।
উপজেলার হোসেন্দী ইউনিয়নের অ্যাকটিভ অ্যাকাডেমি মাঠের পাশে শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সংঘর্ষ হয়।
কিশোরগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল-আমিন হোসাইন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
‘উভয় পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টা থেকে হোসেন্দী অ্যাকটিভ অ্যাকাডেমি মাঠে নয়টি ওয়ার্ডের সম্মেলনের আয়োজন করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি ও পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সোহরাব উদ্দিন।
পাশে হোসেন্দী মাঠে যুবলীগের পথসভার আয়োজন করেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ভিপি হেলাল উদ্দিন। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু।
তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই বিরোধ চলছিল। সেই বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সাবেক এমপি সোহরাব উদ্দিনের পক্ষের সমর্থক ভিপি ফরিদ। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তিনি।
ফরিদ বলেন, ‘বিকেলে হোসেন্দী বাজারসংলগ্ন অ্যাকটিভ মডেল অ্যাকাডেমি কিন্ডারগার্টেন মাঠে হোসেন্দী ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলন চলাকালীন এমপি নূর মোহাম্মদের সমর্থকরা পুলিশের সহায়তায় এখানে হামলা করার চেষ্টা করলে আমরা প্রতিহত করি।
‘আমাদের সম্মেলন হচ্ছে জেনেই তারা গণ্ডগোল করার জন্য সম্মেলনের স্থানের পাশেই যুবলীগের পথসভার আয়োজন করে। সেখান থেকেই তারা জড়ো হয়ে আমাদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ বাধে।
‘পরে আমরা তাদের ধাওয়া করার পর পালিয়ে গেছে। এই মুহূর্তে নির্ধারিত স্থানেই আমাদের সম্মেলন চলছে।’
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন হয়। ছবি: নিউজবাংলা
পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাকুন্দিয়াতে যতদিন পর্যন্ত সোহবারের অবৈধ কমিটি বাতিল না হবে, ততদিন এই ধরনের সংঘর্ষ চলতেই থাকবে।
‘মূল কথা হলো সোহবারের অবৈধ কমিটি উপজেলার কোনো সংগঠনই মেনে নিতে পারছে না। বিকেলে যুবলীগের নেতাকর্মীরা সোহবারের অবৈধ কমিটির প্রতিবাদে পথসভার আয়োজন করে। সেখানে আমি ছিলাম প্রধান অতিথি। যুবলীগের পথসভা চলাকালীন সোহরাবের লোকজন সেখানে হামলা করে। এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারাসহ যুবলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দেয়। পরে তারা পালিয়ে গিয়ে অন্য জায়গায় সভা করেছে।’
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনে বর্তমান এমপি নূর মোহাম্মদ এবং এই আসনের সাবেক এমপি সোহবার উদ্দিনের মধ্যে বিরোধ চলছে গত জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই। আর পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনুর সঙ্গে আগে বিরোধ ছিল সাবেক বর্তমান দুই এমপির।
‘গত বছর পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সোহবার উদ্দিনকে আহ্বায়ক ঘোষণার পর রেনু গিয়ে যোগ দেন নূর মোহাম্মদের গ্রুপে। এর আগে নূর মোহাম্মদের সমর্থকদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার লোকজনের।
‘রফিকুল ইসলাম রেনুও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কমিট না পেয়েই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা করছেন। যোগ দিয়েছেন নূর মোহাম্মদের গ্রুপে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নূর মোহাম্মদের পছন্দের লোকজনকে কমিটিতে রাখা হয়নি আর রেনু কমিটি পায়নি। নূর মোহাম্মদও জানেন রেনু তার শুভাকাঙ্ক্ষী নন, আবার রেনুও জানেন নূর মোহাম্মদ তার শুভাকাঙ্ক্ষী নন। তাদের দুজনের শত্রুই এখন সোহরাব। তাই তাকে প্রতিহত করতে হলে দুজনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই হিসেবেই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।’