বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ছাত্রলীগের সেই তুখোড় নেতারা এখন যেমন

  •    
  • ১৩ মে, ২০২২ ১৫:২০

আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব তৈরির কারখানা হওয়ার কথা থাকলেও এর শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগই মূল দলে খুব একটা ভালো করতে পারেননি। ’৯০-এর পর থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের রাজনৈতিক পরিণতির খতিয়ান তুলে ধরা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগে যারা একসময় তুখোড় নেতা ছিলেন, পরবর্তীকালে অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া তাদের বেশির ভাগই মূল অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগে অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। ছাত্র রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়েও মূল দলের রাজনীতিতে তারা হারিয়ে গেছেন।

তাদের কেউ কেউ দলের পক্ষ হয়ে সংসদ নির্বাচনে গেছেন বটে। কিন্তু দলের ভেতরে চলে গেছেন পেছনের সারিতে। অনেকে হতাশ হয়ে দল বদল করে ভিন্ন দলেও চলে গেছেন।

আবার কেউ কেউ মন্ত্রী হয়েছেন, জাতীয় সংসদে হয়েছেন হুইপ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. হারুন অর রশীদ এ ব্যাপারে নিউজবাংলাকে বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, এলাকার রাজনৈতিক অবস্থা, নেতৃত্ব জট এবং সর্বোপরি গুণগত রাজনীতির অভাবে অনেকেই পরবর্তীতে রাজনৈতিক সাফল্যের ধারাবাহিকতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার কারও কারও মাঝে রাজনৈতিক অঙ্গীকারের অভাবও ছিল বলে তিনি মনে করেন।

হাবিবুর রহমান হাবিব

’৯০ সালের সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি হন হাবিবুর রহমান হাবিব। এরশাদবিরোধী ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে দেশব্যাপী বিপুল পরিচিত এবং জনপ্রিয়তা পান তিনি। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনে পাবনার একটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় তাকে, তবে তিনি বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরে যান।

’৯৬ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ হয়ে হাবিব যোগ দেন বিএনপিতে। তবে সে বছর তিনি ওই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাননি। ২০১৮ সালে তিনি বিএনপি থেকে ওই আসনে মনোনয়ন পান। বর্তমানে তিনি দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং পাবনা জেলা বিএনপির সভাপতি।

শাহে আলম

’৯০-এর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের সহসভাপতি পদে থেকে ভিপি পদে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ শাহে আলম। পরের বছর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন তিনি। কিন্তু ডাকসু নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর রাজনীতি থেকেই একরকম হারিয়ে যান। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের আগে পর্যবেক্ষক সদস্য হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ডাক পেলেও কাউন্সিলে নির্বাচিত কমিটিতে স্থান পাননি শাহে আলম। পরবর্তীতে উপকমিটির সদস্য হন। তবে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে ওঠা হয়নি তার।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা মার্কা নিয়ে বরিশাল-২ আসনে বিজয়ী হন ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা।

অসীম কুমার উকিল

হাবিবুর রহমান হাবিব ও মোহাম্মদ শাহে আলমের সঙ্গে জুটি বেঁধে ছাত্রলীগে নেতৃত্ব দিয়েছেন অসীম কুমার উকিল। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি ’৯০-এর ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগে উপপ্রচার সম্পাদক হন তিনি, যার ধারাবাহিকতা ছিল ২০১৯ পর্যন্ত। পরপর চারটি সম্মেলনে তিনি একই পদে ছিলেন। দলের ২০১৯ সালের সম্মেলনে এসে সাংস্কৃতিক সম্পাদক হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে হয়েছেন প্রথমবারের মতো এমপি। তার স্ত্রী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল আরও আগেই সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত উত্থান না হলেও ধনসম্পদে এই দম্পতির উত্থান ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক থেকে তাদের সম্পত্তির হিসাব চাওয়া হয়।

মঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী

বলা হয়ে থাকে ছাত্রলীগের সবচেয়ে মেধাবী এবং চৌকস সভাপতি ছিলেন মঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরী। ১৯৯২ সালে মঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরীকে সভাপতি ও ইকবালুর রহিমকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগ নব উদ্যমে আত্মপ্রকাশ করে।

’৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৪ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়। কিন্তু তিনি হেরে যান। এরপর আর মনোনয়ন পাননি। প্রতিটি সম্মেলনের আগে তার নাম আলোচিত হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে আজও কোনো পদ পাননি তিনি।

ইকবালুর রহিম

মঈনুদ্দীন হাসান চৌধুরীর রানিংমেট ছিলেন ইকবালুর রহিম। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিল বলিষ্ঠ ভূমিকা। সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের এককালীন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি প্রয়াত আব্দুর রহিমের সন্তান ইকবালুর রহিম দিনাজপুর-৩ আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন বেশ কয়েকবার। কিন্তু এখনও হতে পারেননি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা। রাজনৈতিক পদ-পদবি না পেলেও সংসদীয় রাজনীতিতে তিনি উল্লেখযোগ্য মুখ, কেননা তিনি বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় হুইপ।

এনামুল হক শামীম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি এ কে এম এনামুল হক শামীম ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ’৯৪ সালের সম্মেলনে। পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সহকারী হিসেবে কাজ করেন। মূল দলে প্রথমে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এবং পরে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান। বর্তমান কেবিনেটে দায়িত্ব পান পানিসম্পদ উপমন্ত্রীর।

২০১৮ সালের নির্বাচনে শরীয়তপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলীকে বয়সজনিত কারণে মনোনয়ন না দিয়ে এনামুল হক শামীমকে দেয়া হয়। প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েই তিনি পান উপমন্ত্রীর পদ। কিন্তু দলের ২০১৯ সালের সম্মেলনে পদ হারান। দল এবং সরকার আলাদা করার অংশ হিসেবেই এ সিদ্ধান্ত নেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা। বলা হয়ে থাকে, সাবেক সভাপতিদের মধ্যে দলে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন এনামুল হক শামীম।

ইসহাক আলী খান পান্না

এনামুল হক শামীম সফল হলেও ছাত্রলীগের একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্নার পাল্লা শূন্য। তিনি ’৯৪ সালের সম্মেলনে নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে পিরোজপুর-২ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও পরে জোটগত কারণে ওই আসন তার হাতছাড়া হয়ে যায়। পরে দলের উপকমিটির সদস্য হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ক্যানসারে হারিয়েছেন তার সহধর্মিণী সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী বাঁধনকে।

আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, পান্নার ব্যর্থতার পেছনে আঞ্চলিকতার সমীকরণও কাজ করে থাকতে পারে। তিনি বরিশাল অঞ্চলের নেতা। কেন্দ্রীয় কমিটিতে আগে থেকেই বরিশাল অঞ্চলের নেতাদের আধিক্য। উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ডা. শাম্মী আহম্মেদ, সাবেক আইন সম্পাদক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনিসুর রহমান প্রমুখ বরিশাল অঞ্চলের।

বাহাদুর বেপারী

১৯৯৬ সালে ছাত্রলীগের সভাপতি হন বাহাদুর বেপারী। ছাত্রনেতা হিসেবে ছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু পূর্বসূরি মাইনুদ্দিনের চেয়েও খারাপ অবস্থা বাহাদুর বেপারীর।

গত দুই সম্মেলনে দলের কোনো পর্যায়েই কোনো পদ ছিল না তার। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সম্মেলনের পর তার সময়ের ছাত্রলীগ নেতা এবং বর্তমানে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের উপকমিটিতে জায়গা পেয়েছেন বাহাদুর বেপারী।

তার এলাকা শরীয়তপুরে রয়েছে নেতৃত্ব জট। শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা আব্দুর রাজ্জাক। সেখানে এখন তার ছেলে নাহিম রাজ্জাক সংসদ সদস্য। এদিকে ওই জেলা থেকে কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন এনামুল হক শামীম, ইকবাল হোসেন অপু, বিএম মোজাম্মেল হক প্রমুখ। এ ছাড়া এক-এগারোর সময় কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে না পারায় বাহাদুর বেপারী দলের সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থা হারান। এসব কারণে তার যেখানে থাকার কথা ছিল, সেখানে তো তিনি নেই-ই, বরং টিকে থাকাই দায়।

অজয় কর খোকন

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে সবচেয়ে করুণ অবস্থা অজয় কর খোকনের। তিনি ১৯৯৬ সালের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হন। ছাত্রলীগ থেকে অবসর নেয়ার পরও ভালোই আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু এক-এগারোর প্রেক্ষাপট পাল্টে দেয় সবকিছু। দূরে সরে যান আওয়ামী লীগ থেকে। পদ-পদবি কিংবা দলীয় মনোনয়ন কোনোটাই পাননি।

লিয়াকত শিকদার

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার সংগঠন থেকে অবসর নেয়ার পর ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য হন। সেটাই তার শেষ পদ। দলে এখন অনেকটাই অপাঙ্‌ক্তেয়। ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন চেয়ে পাননি। এদিকে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়ে ভুল জায়গায় তদবির করার কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তার প্রতি বিরাগভাজন। এ ছাড়া হাওয়া ভবনেও তার যোগাযোগ ছিল বলে বাজারে গুজব প্রচলিত। এখন ঠিকাদারি ব্যবসাতেই বেশি ব্যস্ত তিনি।

নজরুল ইসলাম বাবু

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, যার সভাপতি ছিলেন লিয়াকত শিকদার। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পদ না পেলেও ইতোমধ্যেই একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন তিনি।

সাম্প্রতিক নেতারা

মাহমুদ হোসেন রিপন ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছিলেন ২০০৬ সালের সম্মেলনে। এখন আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য। রিপন গাইবান্ধা-৫ আসনে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে এলাকায় অবস্থান করে নিয়েছেন।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার রোটন চৌধুরী ছিলেন মাহমুদ হাসান রিপনের সময়ের সাধারণ সম্পাদক। তিনিও উপকমিটির সদস্য। এর বাইরে ব্যবসায় অনেক ভালো অবস্থান করে নিয়েছেন রোটন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগও এখন উপকমিটির সদস্য। বাগেরহাটের একটি আসনে মনোনয়নের দাবিদার তিনি।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে পদ যাওয়ার পরপরই নানা অভিযোগ ওঠে। এমনকি বিমানবন্দরে চোরাচালানির সঙ্গে তার নাম জড়িয়ে গুজব রটে। এখন তিনি লন্ডন প্রবাসী।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহাগ এখন আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য। ব্যক্তিগত ব্যবসা নিয়ে আছেন।

সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বি এম জাকির হোসেনও আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য। দলের কর্মসূচিতে বেশ সক্রিয় তিনি।

ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠে। সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর