বিয়ের দাবিতে বরগুনায় প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেয়া জামালপুরের সেই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বেতাগী থানা পুলিশ শুক্রবার ভোরে চান্দখালি এলাকার মাহমুদুল হাসানের বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তোলা হলে বিচারক নাহিদ ইসলাম তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
মাহমুদুল হাসানকে প্রেমিক দাবি করে গত ২৮ এপ্রিল থেকে বিয়ের জন্য তার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে ছিলেন ওই তরুণী।
বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম হাওলাদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে মাহমুদুলের বাবা মোশাররফ হোসেন বৃহস্পতিবার মামলা করেছেন। তাতে জিম্মি করে তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ, আসবাবপত্র ভাঙচুর ও আত্মহত্যার হুমকির অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই মামলায় মেয়েটিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
যা ঘটেছিল
ওই তরুণী জানিয়েছিলেন, জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে তার গ্রামের বাড়ি। ঢাকার উত্তরায় থাকেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করছেন।
মেয়েটির দাবি, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত মাহমুদুল হাসানের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। তিন বছর প্রেমের পর সম্প্রতি বিয়ের কথা বললে নানা অজুহাতে মৌকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন মাহমুদুল। রোজার শুরুতে যুবকটি গ্রামের বাড়ি চলে আসেন।
এরপর গত ২৮ এপ্রিল ওই তরুণী বেতাগীর চান্দখালীতে মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে বিয়ের দাবি নিয়ে অবস্থান নেন। তবে সে সময় মাহমুদুলের বাসা তালাবদ্ধ পান।
গত রোববার দুপুরে ওই তরুণী জানান, তিন দিনেও মাহমুদুল বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন এবং নির্ধারিত সময়ে তার দাবি মেনে না নেয়া হলে বাসার সামনেই আত্মহত্যা করবেন।
সেদিন মেয়েটির খোঁজ নিতে গেলে মাহমুদুলের মামা আবদুস সোবাহান গাজীকে স্থানীয়দের সহায়তায় অবরুদ্ধ করে রাখেন সেই তরুণী। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাহমুদুলকে হাজির করার আলটিমেটাম দেন।
নিউজবাংলাকে বেতাগী থানার ওসি জানান, ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে আবেদন করেন মাহমুদুল হাসানের বাবা মোশাররফ হোসেন। বিচারক সেদিনই মূখ্য বিচারিক হাকিম আদালত মাহবুবুর রহমান বেতাগী থানার ওসি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী সাইমুল ইসলাম রাব্বি মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে জানান, ওই তরুণী মাহমুদুলের মামাকে অবরুদ্ধ করে স্থানীয়দের সহায়তায় তালা ভেঙে ওই বাড়িতে ঢোকেন। বিয়ের দাবি মেনে না নিলে সেখানেই আত্মহত্যার হুমকি দেন। বাড়ি ফিরলে মাহমুদুলের মা-বাবাকেও মেয়েটি অবরুদ্ধ করেন।
মাহমুদুলের বাবা মোশাররফ সেদিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছিল এবং একটি সন্তান আছে। সে এসব তথ্য গোপন করেছিল। আমরা তাকে তালাকনামা দেখাতে, বৈধ অভিভাবক হাজির করতে ও গণমাধ্যমের সঙ্গে আর কথা না বলার শর্ত দেই। এসব শর্ত পূরণ করলে বিয়ের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেই।
‘সে শর্ত ভেঙে গণমাধ্যমে কথা বলা চালিয়ে যায় এবং তালাকনামা ও অভিভাবক না এনে উল্টো আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকে। এ অবস্থায় অনধিকার প্রবেশ, জিম্মি করে রাখা ও আত্মহত্যার হুমকির অভিযোগে মঙ্গলবার সকালে ওই মেয়ের নামে মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আইনি প্রতিকার চেয়ে আবেদন করি।’
আইনজীবী রাব্বি জানিয়েছিলেন, মোশাররফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক বেতাগী থানাকে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে আদেশ দেন।
ওসি শাহ আলম নিউজবাংলাকে জানান, মেয়েটির নামে ৪৮৪, ৩০৯, ৩৪৪, ৪২৭, ২৯০, ৫০৬ ধারায় মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪ থেকে ৫ জনকে।
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও বেতাগী সার্কেল) মেহেদী হাসান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ার পর আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছি।’