বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

থানার দখলে গোলারটেক খেলার মাঠ

  •    
  • ১৩ মে, ২০২২ ১১:৫৮

দারুস সালাম থানা গঠনের দুই বছর পর থেকে জব্দকৃত গাড়ি দিয়ে মাঠ ভরা শুরু হয়। এক যুগের বেশি সময় ধরে মিরপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলারটেক খেলার মাঠের এক অংশ এ থানার দখলে।

বছরের পর বছর যায়। গাড়ি কমে আর বাড়ে। আশ্বাসের পর আশ্বাস। তবুও গাড়িমুক্ত হয় না রাজধানীর মিরপুরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলারটেক খেলার মাঠ।

এক যুগ ধরে মাঠের একাংশ জব্দ করা গাড়ি দিয়ে দখল করে রেখেছে দারুস সালাম থানা।

শুধু পুলিশ নয়, অবৈধভাবে সরকারি জমিতে গড়ে উঠেছে জিবি এইচ বি ক্লাব আর সূচনা সমবায় সমিতির অফিস। এর মধ্যে সূচনার নামে জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলর মুজিব সরোয়ার মাসুমের বিরুদ্ধে।

চার একর জায়গা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ এটি। স্থানীয়ভাবে এটি গোলারটেক মাঠ নামে পরিচিত। ২০০৮ সালের ২৩ আগস্ট মিরপুর থানার কিছু এলাকা নিয়ে দারুস সালাম থানা গঠন হয়।

শতাধিক জব্দকৃত গাড়ি দিয়ে গোলারটেক খেলার মাঠের এক অংশ দখল করে রেখেছে দারুস সালাম থানা। ছবি: নিউজবাংলা

স্থানীয়দের অভিযোগ, থানা গঠনের দুই বছর পরই জব্দকৃত গাড়ি দিয়ে তারা মাঠ ভরতে শুরু করে। সে হিসাবে এক যুগের বেশি সময় ধরে এই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলামসহ স্থানীয়রা এই মাঠ গাড়িমুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসার পর থানার পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়, তবে এর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মামলার জব্দকৃত আলামত হিসেবে গাড়িগুলো ওখানেই রাখা হয়েছে। থানার নিজস্ব কোনো জায়গা নাই। জায়গা পেলেই গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলা হবে।

তারা আরও জানান, বিকল্প জায়গা দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশনকে চিঠি দিয়েছেন তারা, কিন্তু জায়গা পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা এ বিষয়ে জানেনই না।

ক্লাবের নামে জায়গা দখলের বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর জানান, সরকারের প্রয়োজন হলে তারা সবাই উঠে যাবে।

সম্প্রতি এই মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে রাখা হয়েছে জব্দকৃত যানবাহন। ১০টি ট্রাক, এক ডজনের মতো বাস। এ ছাড়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মিনিবাস, প্রাইভেট কার, পিকআপ ভ্যান, লেগুনা, মোটরসাইকেল, রিকশা মিলিয়ে ৫০টির বেশি যানবাহন পড়ে আছে।

অন্য পাশে জিবি এইচ বি ক্লাব আর সূচনা সমবায় সমিতি অফিস। তার পাশে বিরাট অংশজুড়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা স্থায়ী ব্যাডমিন্টন কোর্ট তৈরি করে নেট দিয়ে ঘিরে রেখেছেন। মাঠে খেলতে আসা মানুষজন সে জায়গাটি ব্যবহার করতে পারছেন না।

গোলারটেক খেলার মাঠের এক অংশ দারুস সালাম থানার দখলে। ছবি: নিউজবাংলা

রাসেল আহমেদ রাকিব নামের একজন বলেন, ‘ওই দিকে গাড়ি রাখায় কেউ খেলতে আসে না৷ পাঁচ থেকে ছয় বছর ধরে এ রকম গাড়ি দেখছি। কারে বলব? বললে লাভ হবে কী?’

এক বছর ধরে গোলারটেক মাঠের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মানিক খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গাড়ির কোর্টে মামলা আছে। তাই এইখানে ফালাইয়া রাখছে। দারুস সালাম থানার গাড়ি এটা৷’

গোলারটেক মাঠে খেলতে আসা মোহাম্মাদপুর সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শাহরিয়ার মনন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিরপুর এলাকায় খেলার মাঠ কোথাও নেই। পুলিশ জনগণের বন্ধু, তারা যখন জায়গা দখল করে, জনগণ কোথায় যাবে? আমরা মাঠে খেলার জায়গা চাই।’

সেন্ট জোসেফ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়া মারুফ হোসেন বলেন, ‘পাশে থানা হওয়ার কিছুদিন পর থেকে এই মাঠে একটা একটা করে গাড়ি ঢুকতেছে। এটা মাঠের জায়গা; থানার জায়গা না।

‘পাশেই সহকারী পুলিশ কমিশনার দারুস সালাম জোনের জায়গা আছে। সেইখানে গাড়ি রাখুক। আমাদের মাঠে কেন? রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা ব্যাডমিন্টন কোর্ট বানায় তা নেট (জাল) দিয়ে দখল করছে। বাগবাড়ি, হরিরামপুর এলাকার প্রভাবশালীরা এটা করছে।’

সরকারি জমিতে ক্লাব বানানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এই ক্লাব থাকতে পারে। এরা খেলাধুলার আয়োজন করে।’

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুম নিউজবাংলাকে জানান, গাড়ি সরানোর ব্যাপারে তিনি অনেক চেষ্টা করেছেন। মেয়র চেষ্টা করেছেন। পুলিশের যুগ্ম কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। ডিসি ট্রাফিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা শুধু আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কাজ হয়নি।

তিনি বলেন, ‘মেয়র নিজে মাঠে আইসা তারপর কথা বলছে। তবুও মাঠ থেকে গাড়ি সরায় নাই।’

কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেও মাঠ দখলের অভিযোগ

সূচনা সমবায় সমিতির নামে ব্যক্তিগত অফিস বানিয়ে মাঠের একাংশ দখলের অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলর মুজিব সারোয়ার মাসুমের বিরুদ্ধে। তিনি অবশ্য এ অভিযোগ মানতে নারাজ।

‘সূচনা সমবায় সমিতির নামে আপনার বিরুদ্ধে জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে?’

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এই মাঠ যখন পাবলিকের দখলে ছিল, তখনকার সমবায় সমিতি অফিস। ৩০ বছর আগে। তখন এখানে মাঠই ছিল না। এটা বস্তি ছিল।

‘বস্তি উচ্ছেদ করে মাঠ রক্ষায় সমিতি ও ক্লাবের অবদান আছে। সমবায় সমিতি ও ক্লাব মাঠের জায়গা দখল করে নাই; বরং মাঠ প্রতিষ্ঠা করছে। সরকারের যখন প্রয়োজন হবে, তখন এরা উঠে যাবে।’

পুলিশ বলছে দুই ধরনের কথা

দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ নিউজবাংলার কাছে দাবি করেন, গোলারটেক মাঠের সব গাড়ি দারুস সালাম থানা রাখেনি। স্থানীয় কাউন্সিলরের গাড়িই বেশি।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহাতাব উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই গাড়িগুলো দারুস সালাম থানার নয়, মামলার আলামত। আলামত বিষয়টা কোর্টের ব্যাপার। আমরা কোর্টে চিঠিও দিয়েছি।

‘সিটি করপোরেশনের কাছে জায়গাও চেয়েছি। আদালতকে অবগত করার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কাছে জায়গাও চেয়েছি আলামতগুলো রাখতে। জায়গা পেলে গাড়িগুলো সরে যাবে। ১০ বছরেও সিটি করপোরেশন জায়গা না দিলে আমরা কী করব?’

সিটি করপোরেশন জানে না মাঠ দখল হয়েছে

মিরপুরে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাঠ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের, তবে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা জানেনই না তাদের মালিকানাধীন মাঠ দখল হয়েছে।

মাঠ দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (যুগ্ম সচিব) মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার জানা নেই। লিখিত অভিযোগ আসলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর