বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার পাহাড়পুর গ্রাম। দুই দিকেই দুই দেশের সীমান্ত। এর মধ্যে বিস্তৃত পতিত জমি। সেই জমিতে চাষ হয়েছে তিল।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, এ বছর কুমিল্লায় দুই হাজার ৮৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে তিল। যার মধ্যে জেলার তিতাস, মেঘনা, হোমনা, মুরাদনগর ও বুড়িচংয়ে তিল চাষ হয়েছে।
তিল চাষে সময় কম লাগে। খরচও কম। বাজারে তেলের চাহিদা থাকায় তিল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুমিল্লার কৃষকদের।
বুড়িচং উপজেলার পাহাড়পুর-জঙ্গলবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পতিত উঁচু জমিতে তিল চাষ করা হয়েছে। আগাছা নিড়ানিতে ব্যস্ত কৃষকরা। সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
বুড়িচং বেলবাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুল হান্নান জানান, তিনি এ বছর এক একর জমিতে তিল চাষ করেছেন। আগে এই জমিগুলোতে তেমন ফসল হতো না। বছরে একবার ধান চাষ করার চেষ্টা করতেন। তবে পর্যাপ্ত পানির অভাবে তাও সম্ভব হতো না। এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিল চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে।
কী বলছে কৃষক
পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক শহিদ মিয়া বলেন, ‘আগে তিল চাষের পদ্ধতি জানতাম না। এ বছর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিল চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি চাষের খরচ বাদেও বেশ ভালো মুনাফা হবে।’
পাহাড়পুর গ্রামের কৃষক আবদুল হালিম বলেন, ‘এক একর জমিতে তিল চাষ করতে তার খরচ হয়েছে অন্তত ১২ হাজার টাকা। জমিতে তিল হবে ১২ মণ। সাড়ে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি করলে ৫৪ হাজার টাকার তিল বিক্রি করা যাবে। খরচ বাদ দিলেও অন্তত ৪২ হাজার টাকা মুনাফা হবে।’
প্রথম পরিকল্পনা কার?
সীমান্তবর্তী এলাকায় তিল চাষের প্রথম পরিকল্পনা করেন বুড়িচং কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বানিন রায়। তিনি বলেন, ‘আমি সীমান্তবর্তী পাহাড়পুর, জঙ্গলবাড়ি ও বেলবাড়ি এলাকায় গিয়ে পরিদর্শন করি। সেখানে অনেক পতিত জমি দেখেছি। তারপর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে মিটিং করেছি। তারা কৃষকদেরকে একত্রিত করেছেন।
‘আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি। তিলের বীজ-সার সংগ্রহ করে দিয়েছি। কৃষকরাও আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সবকিছু মিলিয়ে তিল চাষে একটা দারুণ সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হলো। গত বছর বুড়িচং উপজেলার পাঁচ হেক্টর জমিতে তিল চাষ হয়। এ বছর আরও তিন হেক্টর যোগ হয়েছে অর্থাৎ আট হেক্টর। আর শুধু সীমান্তবর্তী পতিত জমিতে প্রায় ২০ বিঘা জমিতে নতুন করে তিল চাষ হয়েছে।’
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপপরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিল দুই মৌসুমে চাষ করা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এবং খরিফ-২ মৌসুমের অর্থাৎ ভাদ্র মাস (মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর) তিলের বীজ বপনের উত্তম সময়।’
‘আমরা এ বছর কুমিল্লার কৃষকদের মধ্যে বারি তিল-২ ও বারি তিল-৪ এর বীজ বিতরণ করেছি। এই তিলের আয়ু ৮৫ থেকে ৯০ দিন। অর্থাৎ কম সময়ে কৃষক এই ফসল ঘরে তুলতে পারেন।’
কুমিল্লা রাজগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজগর বলেন, ‘দুই ধরনের তিলের চাহিদা বেশি। কালো তিল ও বাদামি তিল। কালো তিল তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ। আর বাদামি তিল সাড়ে চার হাজার টাকা। রাজগঞ্জ, চকবাজারে বাদামি তিলের চাহিদা বেশি। কারণ বাদামি তিলের তেল গুণাগুণ খুব ভালো।