আওয়ামী লীগ সরকারের পরিণতি শ্রীলঙ্কার পদত্যাগী সরকারের মতো হবে ঘোষণা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তিনি চান না এই পরিণতি হোক শেখ হাসিনা সরকারের।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির ওপর হামলার অভিযোগ এনে এই জমায়েত করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
শ্রীলঙ্কার পদত্যাগী সরকারের পরিণতির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচার-লুটপাটকারীদের পরিণতি ভালো হয় না। শ্রীলঙ্কার অবস্থা কেন এমন হলো? একসময় শ্রীলঙ্কার মুদ্রা পাচারকারীরা আমেরিকায় ধরা পড়ল।
‘রাজাপাকসে ও তার পরিবার লুটপাট ও কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে শান্তিপ্রিয় শ্রীলঙ্কার মানুষ আজ ফুঁসে উঠেছে। রাজাপাকসে পালিয়েছে। তার লোকজন নদীতে ঝাঁপ দেয়ারও সুযোগ পাচ্ছে না। এই আওয়ামী লীগ সরকারের পরিণতি রাজপাকসে সরকারের চেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।’
তবে শেখ হাসিনা সরকারের এই পরিণতি চান না উল্লেখ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘আমরা চাই মানসম্মানের সঙ্গে আপনারা ক্ষমতা থেকে প্রস্থান করুন। নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন। এরপর নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে, তারা সরকার গঠন করবে।’
তিনি বলেন, ‘লুটপাটের জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। জনগণ দেশ স্বাধীন করেছে সুখে থাকার জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখার জন্য। আমরা সেই রাষ্ট্রের জন্য লড়াই করছি। আমরা ক্ষমতার জন্য লড়াই করছি না, আমরা জনগণকে ক্ষমতাবান করতে লড়াই করছি। জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে।’
‘টিভিতে ছবি দেখানোর প্রবণতা ছাড়ুন’
আন্দোলনের নামে টেলিভিশনে ছবি দেখানোর প্রবণতা চলছে বলে মনে করেন গয়েশ্বর। এই প্রবণতা ছেড়ে রাজপথে সক্রিয় হতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আঘাত আসলে আর বসে থেকে মার না খেয়ে পাল্টা হামলার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, এই পাল্টা হামলা তাদের গণতান্ত্রিক ও সংবিধানসম্মত অধিকার।
নেতাকর্মীদের রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘টেলিভিশনে ছবি তোলার প্রবণতা আমাদের বদলাতে হবে। এখন সময় নেই। এখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। ছাত্র-যুবকরা যেই স্লোগান দিত, সেই স্লোগান দিতে হবে।’
এখন থেকে কী স্লোগান দিতে হবে, সেটিও নেতাকর্মীদের শিখিয়ে দেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘স্লোগান দিতে হবে অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, খালেদা জিয়ার অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন, তারেক রহমানের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন।’
‘পাল্টা হামলা অধিকার’
এখন থেকে কোথাও হামলা হলে মার না খেয়ে পাল্টা মার দেয়ার ঘোষণাও দেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘পোশাকে হোক বিনা পোশাকে হোক আর ছাড় দেয়ার সময় নেই। আর মুখ বুজে পিঠে লাঠির মার খাওয়ার সময় নেই। আমরা রাজপথে একমাত্র রক্ত দেব, আর যারা রক্ত নিবে-সেই দিন শেষ জনগণের বাংলাদেশ সামনে অপেক্ষা করছে।’
তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় ড. মোশাররফ হোসেনের বাড়িতে হামলা হয়েছে, ফেনীতে ভিপি জয়নালের বাড়িতে হামলা হয়েছে, আরও অনেক জায়গায় হামলা হয়েছে। কিন্তু মিডিয়া খোঁজ রাখে না। এটা তাদের (ক্ষমতাসীনদের) পরিকল্পিত মহড়া।
‘এখন হামলার প্রতিবাদ নয়; প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। হামলা হলে পাল্টা হামলা, আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত করতে হবে। যেখানেই হামলা সেখানেই প্রতিরোধ, সেখানেই পাল্টা হামলা- এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।
‘জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অন্যায়ভাবে শুধু আমি মার খাব, আমি মার খাওয়ার দায়িত্ব নেব, অন্যরা আমাকে মেরে যাবে-এটা সংবিধানে নেই। আমরা যা করি সংবিধানসম্মত।’
প্রতিবেশী একটি দেশ আগামী নির্বাচনে সিট দেয়ার জন্য ফেরি করছে জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি সিট দেয়ার কে? সংবিধানের কোনো পাতায় লেখা আছে?
‘এইসব ফেরিওয়ালারা যেখানে যেখানে ফেরি করতে যান, নেতাকর্মীদের বলব রাস্তায় পেলে পা দুইটা ভেঙে দেবেন। এখন দালাল ধরতে হবে, এই সরকারের ফাঁদে যারা পা দেবে, তাদের ঘেরাও করতে হবে। তাদের নজরে রাখতে হবে। আমরা একটা সিদ্ধান্তে একমত হয়েছি, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন নয়। শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমতা নেই।’
ঢাকা উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সভাপতিত্ব ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সরাফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, আব্দুস সালাম আজাদ, আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব।