বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এবারের ঈদযাত্রায় প্রাণহানি বাড়ল ২০ শতাংশ

  •    
  • ১২ মে, ২০২২ ১৬:০৮

গত বছরের ঈদুল ফিতরের চেয়ে এ বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৮.৪১ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাণহানি বেড়েছে ১৯.৭৪ শতাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশ। এবার ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ।

ঈদের আগে ও পরে ১৪ দিনে দেশে ২৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৭৬ জন। আর আহত হয়েছে কমপক্ষে দেড় হাজার জন।

নিহত যাত্রীদের মধ্যে নারী ৩৮ ও শিশু ৫১ জন।

গত বছরের ঈদুল ফিতরের চেয়ে এ বছর সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৮.৪১ শতাংশ। অন্যদিকে প্রাণহানি বেড়েছে ১৯.৭৪ শতাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশ।

এবার ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ।

এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৪ পথচারী, যা মোট নিহতের ১৪.৩৬ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, অর্থাৎ ১৩ শতাংশ।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে।

২৫ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

এতে বলা হয়, এ সময়ে সাতটি নৌ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ জন। আহত হয়েছেন দুজন। নিখোঁজ রয়েছে আরও দুজন।

রেলপথে ১৭টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৯। আহত হয়েছে তিনজন।

যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৫৬ জন (৪১.৪৮%), বাস যাত্রী ৩২ জন (৮.৫১%), ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ২০ জন (৫.৩১%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপের যাত্রী ১৫ জন (৩.৯৮%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু) ৭৮ জন (২০.৭৪%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) যাত্রী ১৩ জন (৩.৪৫%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ৮ জন (২.১২%)।

দুর্ঘটনা হওয়া সড়ক

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৩২টি (৪৬.৬৪%) জাতীয় মহাসড়কে, ৮৭টি (৩০.৭৪%) আঞ্চলিক সড়কে, ৪১টি (১৪.৪৮%) গ্রামীণ সড়কে এবং ২৩টি (৮.১২%) শহরের সড়কে হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরন

দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৬৭টি (২৩.৬৭%) সংঘর্ষ, ১১২টি (৩৯.৫৭%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৬২টি (২১.৯০%) পথচারীকে চাপা বা ধাক্কা দিয়ে, ৩১টি (১০.৯৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করে এবং ১১টি (৩.৮৮%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা

ঈদযাত্রায় ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১৫৬, যা মোট নিহতের ৪১.৪৮ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ছিল ৪৫.২২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত চালক ও আরোহীদের মধ্যে ৫১.৪২ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ২০ বছর।

আগের বছর তথা ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে উদযাপনের সময় ১২১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩৪ জন নিহত হয়। সেই বিবেচনায় এ বছর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫.৭৪ শতাংশ। প্রাণহানি বেড়েছে ১৬.৪১ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ১৮.৯৫ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৭.০৫ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৮.৫৪ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৭.৬২ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু) ১৯.৫৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম) ৪.৬৩ শতাংশ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ৩.৬২ শতাংশ।

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা

দুর্ঘটনায় পড়া যানবাহনের সংখ্যা ৪৯৬টি। এর মধ্যে ট্রাক ৫৬, বাস ৯২, কাভার্ডভ্যান ৩, পিকআপ ২২, ট্রলি ৬, লরি ৩, ট্রাক্টর ৪, মাইক্রোবাস ১৩, প্রাইভেটকার ১৬, অ্যাম্বুলেন্স ৪, জীপ ২, মোটরসাইকেল ১৩৭, থ্রি-হুইলার ৯৭ (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৩ এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ১৮টি।

সময় বিশ্লেষণ

সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে সকালে। মোট দুর্ঘটনার ২৬.৮৫ শতাংশ হয়েছে সকালে। এর পরে আছে দুপুর (২৪.৭৩%) ও বিকেল (২১.৯০%)।

রাতের দিকে দুর্ঘটনার হার ১৩.৪২% হলেও সন্ধ্যায় হয়েছে ৮.১২%। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে ভোরে (৪.৯৪%)।

দুর্ঘটনার বিভাগভিত্তিক পরিসংখ্যান

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি হয়েছে। এ বিভাগে ৮৩টি দুর্ঘটনায় ১০৬ জন নিহত হন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৭টি দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়।

একক জেলা হিসেবে ঢাকায় সবচেয়ে বেশি ১৯টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। নাটোর জেলায় সবচেয়ে বেশি ১৮ জন নিহত হয়েছে।

শরীয়তপুর, খাগড়াছড়ি, নড়াইল, ঝালকাঠি, ঠাকুরগাঁও এবং নেত্রকোনায় সামান্যসংখ্যক দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯.৩২%, প্রাণহানি ২৮.১৯%।

এর পরে আছে চট্টগ্রাম বিভাগের নাম। এখানে দুর্ঘটনা ২০.৮৪%, প্রাণহানি ১৯.৪১%। রাজশাহী বিভাগ আছে তালিকার তৃতীয় স্থানে। এ বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮%, প্রাণহানি ১৭%।

এরপর খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৯.১৮%, প্রাণহানি ১০.১০%। রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.৪৮%, প্রাণহানি ১০.৬৩%।

ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৩৬%, প্রাণহানি ৬.৬৪%। বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৫.৩০%, প্রাণহানি ৫.৫৮%। সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ২.৪৭%, প্রাণহানি ২.৩৯%।

সুপারিশ

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ১২টি সুপারিশ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।

১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে।

২. চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে।

৩. বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি করতে হবে।

৬. পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে।

৭. যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।

৮. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।

৯. রেল ও নৌপথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়কপথের ওপর চাপ কমাতে হবে।

১০. গণপরিবহন উন্নত, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করে মোটরসাইকেল ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে।

১১. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

১২. সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর