এবারের ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৪৪৩ জন নিহত ও ৮৬৮ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে শুধু সড়ক-মহাসড়কে ৩৭২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪১৬ জন আর আহত হয়েছে ৮৪৪ জন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২২ প্রকাশের সময় এই তথ্য তুলে ধরেন।
সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারেরও প্রতিবেদনটি তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতি বছর ঈদ কেন্দ্রিক সড়ক দুর্ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সংগঠনটি ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও যাত্রী হয়রানির বিষয়গুলো দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করে আসছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ২৬ এপ্রিল থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১০ মে পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৭২টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত, ৮৪৪ জন আহত হয়েছে।
বিগত ২০২১ সালের ঈদুল ফিতরে হতাহতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ১৪.৫১ শতাংশ, নিহত ২২.৩৫ শতাংশ এবং আহত ২৬.৩০ শতাংশ বেড়েছে।
উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ২৭টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ৩টি দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৬৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন নিহত, ১১০ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৪৪.০৮ শতাংশ, নিহতের ৩৪.৮৫ শতাংশ এবং আহতের প্রায় ১৩.০৩ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ২০৯ চালক, ২৪ পরিবহন শ্রমিক, ৮৮ পথচারী, ৬২ নারী, ৩৫ শিশু, ৩৩
শিক্ষার্থী, ২ সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ সদস্য, ২ শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৬ নেতাকর্মী, ২ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ১ চিকিৎসকের পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছে ২ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১ পুলিশ সদস্য, ডিজিএফআইয়ের ২ সদস্য, সেনাবাহিনীর ১ সদস্য, নৌবাহিনীর ২ সদস্য, ৩৫ নারী, ১ চিকিৎসক, ২৫ শিশু, ২৫ শিক্ষার্থী, ২ শিক্ষক, ১২৫ চালক, ১২ পরিবহন শ্রমিক, ৬০ পথচারী, রাজনৈতিক দলের ৫ নেতাকর্মী।
আরও বলা হয়, মোট দুর্ঘটনার ৩৩.৮৭ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৪৪.৩৫ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ১৩.৪৪ শতাংশ ফিডার রোডে হয়েছে। এ ছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৮৩ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ২.৪১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে সংঘটিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজ্জাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘এবারের ঈদে করোনার বিধিনিষেধ না থাকায় বেশি মানুষের যাতায়াত করে। গত ২ বছরে করোনা সংকটের কারণে গণপরিবহন বন্ধ-চালুর ফাঁকে প্রায় ১০ লাখ মোটরসাইকেল ও ২০ লাখ ইজিবাইক রাস্তায় নামে। ফলে এবারের ঈদযাত্রায় ২৫ লাখ মোটরসাইকেল, ৪০ লাখ ইজিবাইক সড়কে থাকার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার উল্লেখযোগ্য তৎপরতার কারণে ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও সড়ক দুর্ঘটনা বরাবরের মতো বেড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্রকে একটি প্রতীকী চিত্র বলা চলে। প্রকৃতপক্ষে দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ার কারণে পঙ্গু হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ রোগী ভর্তি হলেও ঈদের এই সময়ে ২০০ থেকে ২৫০ জন হারে প্রতিদিন রোগী ভর্তি হয়েছে। যার ৬০ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৫ শতাংশ ইজিবাইক দুর্ঘটনায় শিকার হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ছাড়াও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। দেশের বিভাগীয় হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০ সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে।