এখন থেকে কোথাও হামলা হলে প্রতিরোধ এবং পাল্টা হামলার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো ‘আসন ভাগাভাগির নির্বাচন’ হতে দেয়া হবে না।
কুমিল্লায় বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং জোটের শরিক এলডিপি নেতা রেদোয়ান আহমেদের ওপর হামলার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সভায় এসব কথা বলেন তারা।
বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এই সমাবেশের আয়োজন করে।
গত ৯ মে কুমিল্লার চান্দিনায় কলেজ মাঠে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান ২০০১ সালে বিএনপির মনোনয়নে সংসদ সদস্য হয়ে পরে এলডিপিতে যোগ দেয়া রেদোয়ান।
সমাবেশস্থলের বাইরে ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। রেদোয়ানের গাড়িতে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। পরে তিনি গাড়ি থেকে দুটি গুলি ছোড়েন। এর পর ছাত্রলীগের হামলা থেকে বাঁচতে গাড়ি নিয়ে থানায় যান। পুলিশ তখন এলডিপি নেতা, তার গাড়িচালক রেজাউল করিম, অনুসারী মো. আলী ও বাকি বিল্লাহকে আটক করে।
তার দুই দিন আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের পাশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ওপর তার বাসার সামনে হামলার অভিযোগ ওঠে।
সেদিন সকালে মোশাররফ নিজ বাসভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ১০টার দিকে তিনি তিতাস উপজেলায় এক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন।
বিএনপি নেতা সেদিন বলেন, ‘আমি সকালে তিতাসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হতেই ওরা এসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।’
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপির প্রতিবাদ সভায় নেতাকর্মীরা। ছবি: নিউজবাংলা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যেখানে হামলা হয়েছে সেখানে প্রতিরোধ শুরু হয়েছে, এখন প্রতিঘাত করতে হবে। আমি শ্রীলঙ্কার মতো বলব না, আপনাদের (সরকারের) তালেবানদের মতো পরিস্থিতি হতে পারে।’
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। আমরা তাদেরকে বলে দিতে চাই, এখন থেকে যেখানে হামলা হবে সেখানে পাল্টা হামলা করা হবে।’
‘আসন ভাগাভাগির নির্বাচন হতে দেয়া হবে না’
সমাবেশে বিএনপি নেতারা আবার বর্তমান সরকারের অধীনে ভোটে না যাওয়া এবং নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থাপনায় না হলে ভোট হতে না দেয়ার ঘোষণা দেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না এবং আসন ভাগাভাগির কোনো নির্বাচন এ দেশে হতে দেয়া হবে না।’
সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ইভিএমে নির্বাচন হবে- এটা প্রধানমন্ত্রী বলার কে? নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে কীভাবে ভোট হবে। শেখ হাসিনা চাচ্ছেন ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় আসবেন। অতএব তার পাতানো ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।’
সমাবেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতারা। বর্তমান সরকারকেও একই পরিণতির বিষয়ে সতর্ক করেন তারা।
সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থে তেলের দাম বাড়িয়েছে অভিযোগ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই টাকা কার পকেটে কোথায় পাচার হয় বলতে হবে। আমরা ভবিষ্যতে তাদেরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মেগা প্রজেক্টের নামে দুর্নীতি করে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আজ শ্রীলঙ্কায় সেখানে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী, এমপিরা পালিয়ে যাচ্ছেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও বক্তব্য দেন।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।