অর্থপাচার ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম বৃহস্পতিবার এ দণ্ডাদেশ দেন।
ডেসটিনির দুই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের নামে বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই কলাবাগান থানায় দুটি মামলা হয়। এসব মামলায় ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ করা হয়।
দুই মামলার একটিতে ২০১৪ সালে ১৯ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। অন্য মামলাটিতে অভিযোগপত্র দেয়া হয় ৪৬ জনের নামে।
ডেসটিনির কারাবন্দি এমডি রফিকুল আমীনসহ ১২ জন দুই মামলারই আসামি। এগুলোতে মোট আসামি ৫৩ জন।
দুই মামলায় ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার এই টাকা থেকে পরিশোধ করা হবে গ্রাহকদের দায়-দেনা।
রায়ের পর দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীনকে ১২ বছরের সাজার পাশাপাশি ২০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ বীর প্রতীককে সবচেয়ে কম ৪ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। তাকে সাড়ে তিন কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
‘মোহাম্মদ হোসেনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড ও দেড় কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অন্য সব আসামিদের মোট ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
জরিমানার এই টাকা গ্রাহকদের মাঝে কীভাবে বণ্টন করা হবে, তা নিয়ে একটি কমিটি গঠনের অভিমত দেয় আদালত। আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম বলেন, ‘একটি ৬ সদস্যের কমিটি হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার একজন ও একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট থাকবেন। এই কমিটির সচিব থাকবেন কোঅপারেটিভ (সমবায়) বিভাগের একজন সদস্য।
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘...রাষ্ট্রের অনুকূলে যে সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, যারা ভোক্তা, কারা, কীভাবে পাবে, কতটুকু পাবে, তা বুঝিয়ে দেবে এই কমিটি। দুদক চেয়ারম্যানকে এসব নির্দেশনা প্রয়োগের নির্দেশনা দেন আদালত। আইও (তদন্ত কর্মকর্তা) যাতে এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রাখা হয়, দুদক চেয়ারম্যানকে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘এই জরিমানার সমুদয় টাকা ৪৫ (বি) ধারা অনুযায়ী কমপেনসেট করার জন্য, যারা নিঃস্ব হয়ে গেছে (ভোক্তা), তাদের মধ্যে এ টাকা প্রপার ডিস্ট্রিবিউট করার কথা রায়ে বলা হয়েছে। কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে গ্রাহকরা জরিমানাকৃত অর্থের মধ্যে কে কত অংশ পাবে।’
ডেসটিনির বিষয়ে আইনজীবী সালাম বলেন, ‘সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত হওয়া সত্ত্বেও তারা সমবায় আইনের পরিপন্থি কাজ করেছে। প্রতারণামূলকভাবে তারা ২০০১ সালের আইন (যা ২০০৪ সালে সংশোধিত হয়) লঙ্ঘন করে।
‘তাদের নিজস্ব বাইলজকে লঙ্ঘন করে সাধারণ সদস্য অবহিত না করে, অনুমতি না নিয়ে অবৈধ চুক্তি সম্পাদন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা এমন একটি প্যাকেজ চালু করে, যেখানে প্রত্যেক গ্রাহক থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিত, যার মধ্যে ৪ হাজার ৩০০ টাকা আলাদা হিসাবে স্থানান্তরের মাধ্যমে সর্বমোট ১ হাজার ৯০১ কোটি টাকা আত্মসাৎ অর্জন করেন মর্মে অনুসন্ধানে পাওয়া যায়।
‘তার মধ্যে মাত্র ৫৩ লাখ টাকা তদন্তের সময় অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায়। বাকি টাকা তারা মানি লন্ডারিং করেছে।’