যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে পাবনার ঈশ্বরদীতে কর্মরত টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বিদ্যুৎগতিতে।
অন্যদিকে রাজশাহী স্টেশনে যাত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর করার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মী মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে চার মাসেও চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিতে পারেনি রেলওয়ে।
শফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা আর তাকে সাময়িক বরখাস্তের পেছনে যে আসলে যাত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার নয়, মন্ত্রীর স্ত্রীর ফোন কাজ করেছে, সেটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
অথচ এখানে যারা অভিযোগ করেছেন, তারাই আইন ভেঙেছেন। তারা রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর দূর সম্পর্কের ভাগ্নে, যারা টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠে জরিমানার মুখে পড়েন।
পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে ফাঁস হলে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, তার স্ত্রী তাকে না জানিয়ে যে কাজ করেছেন, তাতে তিনি বিব্রত। আর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ তুলে নেয়ার পর শফিকুল আবার কাজ শুরু করেছেন।
অন্যদিকে রাজশাহী স্টেশনে চার মাস পেরিয়ে গেলেও মো. রুবেল নামের যাত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর করার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মীকে চূড়ান্ত শাস্তি না দেয়ার ঘটনায় কর্তৃপক্ষ বলছে, এ বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তিনি সাময়িক বরখাস্ত আছেন।
যা ঘটেছিল
ঘটনাটি গত ৪ জানুয়ারির। রুবেল শাহযালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনসার সদস্য হিসেবে কর্মরত। ঢাকা থেকে ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছেন বেলা সোয়া ১২টার দিকে।
রুবেল জানান, স্টেশন থেকে বের হওয়ার পথেই তিনি রেলকর্মীর মারধরের শিকার হন। রুবেলের টিকিটের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের বানানে কিছুটা অমিল থাকায় তর্কাতর্কির জেরে তাকে মারধর করেন রাজশাহী স্টেশনের টিকিট কালেক্টর মেহেদী হাসান রাসেল।
রুবেল জানান, তার আইডি কার্ডে নামের বানান ‘আরইউবিইএল’। কিন্তু রেলওয়ের টিকিটের জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুলবশত নামের বানানে ‘আরইউবিএএল’ ওঠে।
এ নিয়ে রেলকর্মী রাসেলের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এরই একপর্যায়ে তাকে স্টেশনের একটি ঘরে নিয়ে মারধর করেন রাসেল।
রুবেলকে ধাক্কাধাক্কি ও চড়-থাপ্পড় মারার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ঘটনার পরদিন। ২ মিনিট ৪৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে একাধিকবার রুবেলকে মারধর করতে দেখা গেছে।
কথোপকথনে শোনা যায়, রাসেল পুরো সময় ধরেই চিৎকার করছেন। কথোপকথনে শোনা যায়, রেলকর্মী রাসেল বলছেন, ‘এই আইডি কার্ড, এই আইডি কার?’
রুবেল বলেন, ‘আমার আইডি।’
রাসেল চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘চিল্লাচ্ছিস ক্যান। এই চিল্লাচ্ছিস ক্যান?’
এরপরই রুবেলকে তিনি থাপ্পড় মারেন।
রুবেল বলে ওঠেন, ‘আমাকে মারলেন কেন আপনি? আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ডাক দেন। আপনি আমাকে মারলেন কেন?’
উপস্থিত অন্যদের রুবেল বলেন, ‘উনি আমাকে মারলেন।
আমার আইডি কার্ড, সবই ঠিক আছে। আপনারা গায়ে হাত তুললেন কেন বলেন?’
রাসেল বলেন, ‘তুই অত চিল্লালি কীসের জন্য। এই চিল্লালি কেন?’
এই বলেই আবার দুটি ঘুষি মারেন রাসেল। তিনি বারবার বলতে থাকেন, ‘তুই চিল্লালি কীসের জন্য?’
এ সময় অন্য রেলকর্মীরা রাসেলকে মারধর করা থেকে আটকানোর চেষ্টা করেন।
রুবেল বলেন, ‘আমাদের স্টাফ আছে এখানে।’
রাসেল চিৎকার দিয়ে বলে ওঠেন, ‘তোর বাপ থাক। তোর চাকরি করি আমি?’
এই বলে অশ্লীল গালি দেন তিনি। বলেন, ‘চাঁপাইয়া কোথাকার। চাঁপাইয়ের কোন বাপ আছে ডাক। তুই তোর স্বভাবের জন্য মার খাইছিস।’
এরপরও তিনি চিৎকার করতে থাকেন।
লিখিত অভিযোগ
এ ঘটনায় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন রুবেল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ জানুয়ারি পশ্চিম রেলওয়ের ডেপুটি সিসিএম গৌতম কুমার কুন্ডুকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। এরই মধ্যে তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনও জমা দিয়েছেন।
রুবেল নিউজবাংলাকে জানান, তদন্ত কমিটি তার সঙ্গে কথা বলেছিল সে সময়। তবে এরপর আর কোনো যোগাযোগ নেই। তার অভিযোগের বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানেনও না।
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে রাসেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক চূড়ান্ত কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা জানানো হয়নি।
রুবেল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি চাই যিনি প্রকাশ্যে মারধর করেছেন তার বড় শাস্তি হোক। সেটা জানতে পারলে আমি স্বস্তি পাব।’
তদন্ত কমিটির প্রধান গৌতম কুমার কুন্ডু জানান, তদন্ত শেষে তিনি সুপারিশসহ প্রতিবেদন মহাব্যবস্থাপক বরাবরে জমা দিয়েছেন প্রায় দুই মাস আগে।
রিপোর্টে কী কী সুপারিশ করা হয়েছিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন সবটা মনে নাই। তবে রাসেলের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়াসহ আরও একাধিক সুপারিশ ছিল।
প্রতিবেদনটি পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক গ্রহণের পর বিভাগীয় পর্যায়ে পাঠিয়েছেন বলে জানেন গৌতম কুমার কুন্ডু।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাসেলকে ঘটনার পরপরই সাসপেন্ড করা হয়েছে। এটি একটি শাস্তি। এ ছাড়া তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী বিভাগীয় শাস্তির জন্য এটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকেই চূড়ান্ত বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা হবে।’