আগামী জুনের শেষে প্রধানমন্ত্রী যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেতুর যে কাজগুলো বাকি আছে, সেগুলোও এর মধ্যে শেষ হয়ে যাবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
সেতু উদ্বোধন পিছিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তিনি জেনে শুনেই বলছেন যে জুনেই সেতু উদ্বোধন হবে।
বুধবার সেতু বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ১১১ তম বোর্ড সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সড়ক মন্ত্রী।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর সব স্প্যান বসে যাওয়ার পর থেকেই চলতি বছরের জুনের মধ্যে সেতু চালুর লক্ষ্যের কথা জানায় সরকার। তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
৬ এপ্রিল জাতীয় সংসদে এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান বলেন, ‘চলতি বছরের শেষ নাগাদ পদ্মা সেতু চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।’
প্রশ্ন ওঠে, তাহলে কি আরও ছয় মাস অপেক্ষা করতে হবে পদ্মা সেতুর জন্য?
সড়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী মাসের শেষ দিকে আমরা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ পাঠাচ্ছি। তিনি আগামী মাসে (জুন) যেদিন সময় দেবেন, সেদিনই আমরা বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
সেতুর কাজ শেষ নিয়ে ধোঁয়াশার কারণ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা শেষ দিকে আছি। কাজ যতটুকু বাকি আছে তা চলতি মাসেই শেষ করতে পারব। আমি মন্ত্রী হিসেবে জেনে-শুনেই বলছি, জুনেই সেতু উদ্বোধন করা হবে।’
মন্ত্রী জানান, মূল সেতুর কাজের অগ্রগতি শতকরা ৯৮ শতাংশ, নদীশাসনের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ এবং সেতুর কার্পেটিংয়ের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। সব মিলিয়ে সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ২৩ জুন সেতু উদ্বোধনের কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।সেতুটি কার নামে হবে, এ বিষয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের জানান, তারা ‘শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু’ নাম রাখতে চান কিন্তু প্রধানমন্ত্রী রাজি হচ্ছেন না।
পদ্মা সেতুতে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। ফাইল ছবি/ নিউজবাংলাউদ্বোধনের যে সামারি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে, সেখানে শেখ হাসিনার নামেই তা করা প্রস্তাব করা হবে। পরে প্রধানমন্ত্রীই সেটা ঠিক করবেন।
পদ্মা সেতুর টোল হার এখনও ঠিক করা হয়নি জানিয়ে কাদের জানান, টোলের সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিনো হয়েছে। তিনি যা অনুমোদন করবেন সেটাই হবে।
সেতু মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মাণাধীন টানেলের দুটি টিউবের প্রথমটির রিং প্রতিস্থাপন, বোরিং এবং লেন স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় টানেল টিউব এর রিং প্রতিস্থাপনসহ বোরিং কাজও শেষ হয়েছে।
দ্বিতীয় টানেল টিউবের ২ হাজার ৪৫০ মিটার লেন স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৬৮৩ মিটার লেন স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি শতকরা ৮৫ শতাংশ।
ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সভায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, বিদুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব মইনুল কবির, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোস্তাফিজুর রহমান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবীর, ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদ, সেতু বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মনজুর হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।