দেশে কোনো বেকার নেই, বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বুধবার তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বারবার বলে আসছি, আমি মনে করি বাংলাদেশে দেয়ার ইজ নো আন এমপ্লয়মেন্ট। ফসল ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাচ্ছি না। বিজিএমইএ বলছে, পোশাক কারখানায় শ্রমিক পাচ্ছি না। তাহলে আন এমপ্লয়মেন্টটা কোথায়?’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, তারা এখন শ্রমিক পাচ্ছে না। বিজিএমই আমাকে বলেছে, জর্ডানে পোশাক কারখানায় আমাদের শ্রমিকগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আপনি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বলেন, এটা বন্ধ করতে, কারণ আমরা পোশাক কারখানায় শ্রমিক পাচ্ছি না।
‘ফসল ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাচ্ছি না। গতবার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ছাত্রলীগ-যুবলীগ কৃষকদের সহায়তা করেছে। গ্রামীণ অঞ্চলে ইউনিয়ন লেভেলে অনেক উন্নত হচ্ছে। সেখানে বিউটিপার্লার হচ্ছে। দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে আন এমপ্লয়মেন্ট কোথায় আছে?’
উচ্চশিক্ষিত ঈদের মধ্যে কাজ না পাওয়ার সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়েছেন, তারা এখন বসে সরকারকে বলছে চাকরি দাও। আপনারা ডিগ্রি নেয়ার আগে চিন্তা করেন নাই কি ক্যারিয়ার গড়বেন? ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাকাউন্টটেন্ট ডিগ্রি যারা নেয়, তাদের তো চাকরি পায়তে কোন অসুবিধা হয় না। বিদেশে সবাই কিন্তু ডিগ্রি নিতে যায় না। ভোকেশনাল একটা ডিপ্লোমা নিয়ে প্রফেশনে চলে যায়। ডিপ্লোমা ট্রেনিং আছে, এটা নিয়েও কাজ করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘আননেসাসারি ইউনিভার্সিটি ডিগ্রি নিয়ে অনেকে চাকরি পাচ্ছে না। আরেকটা সমস্যা আছে। যদি ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট হয়ে যায়, তখন অন্য কোন কাজ করতে চায় না; তারা ভাবে আমি ইউনিভার্সিটি গ্রাজুয়েট আমাকে ওই ধরনের একটা কাজ দিতে হবে। তবে এগুলো নিয়ে আমরা অনেক কাজ করছি, সবাই যেন কাজ করতে পারে। আমরা ফ্রিল্যান্সিংটাকে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ফ্রিল্যান্সারদের সকল সমস্যা সমাধান করেছি। প্রথম দিকে টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে আনা যেত না। বিদেশি আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যম হয়ে আনতে হতো। এখন সরাসরি আসছে; আন অফিসিয়ালিও আসছে। তবে আমরা ফ্রিল্যান্সার বান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছি। বর্তমানে এখানে ১ বিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে। অনেকে বলছেন ২০৪১ সালে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হবে।
‘আমরা বলছি, এতোদিন অপেক্ষা করা লাগবে না, আমি আশাবাদী ২০২৫-২৬ সালেই ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করতে পারব ফ্রিল্যান্সিং ও আইসিটি খাতে মিলে। আমি মনে করি গার্মেন্ট খাতের পরেই হবে ফ্রিল্যান্সিং খাত।’
আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘গতকাল একনেকে ১৪টি শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরির প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে দুই দফায় ১১ ও ৮টি সেন্টার অনুমোদন পায়। ২২টি সেন্টার তৈরির প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের প্রত্যেকটি জেলায় একটি করে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এতে বর্তমান ফ্রিল্যান্সারদের আরও দক্ষ করে তৈরি করা এবং নতুন ফ্রিল্যান্সার তৈরির পথ আরও সুগম হবে।
‘শুধু তা-ই নয়, স্কুল পর্যায় থেকে আইটি ও কোডিং এর দিকে নজর দেয়া হচ্ছে। এ জন্য স্কুলগুলোতে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব তৈরি হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য একটা আলাদা পলিসি বা গাইড লাইন তৈরি করা দরকার।’
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান ডা. তানজিবা রহমান বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিশ্ববাজার দিন দিন বাড়ছে। গ্লোবাল মার্কেটে আমাদের পদচারণা বাড়াতে পারি। ফ্রিল্যান্সারের ৭০ শতাংশ তরুণ। দেশে ৭৫ শতাংশ বেকার তরুণ আছে। তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ যদি ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।’
সভাপতির বক্তেব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সারদের দক্ষতা উন্নয়নে তাদের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করছি আমার। এখন চাইলে ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে সনদের জন্য আবেদন করা যায়। অনেকে এখানে আবেদন করছে এবং সনদ পাচ্ছেন।’