ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে উপকূলসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। থেমে থেমে আবার কখনও টানা বৃষ্টির কারণে পানি জমতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলের ফসলের জমিতে। এ অবস্থায় ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক।
মাদারীপুরে নিম্নাঞ্চলের আধাপাকা বোরো ধান কেটে নিচ্ছেন চাষিরা। তারা বলছেন, এতে তারা কাঙ্ক্ষিত ফলন পাবেন না।
কৃষি বিভাগ বলছে, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। তাই চাষিকে ধান কাটার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কালকিনির শশীকর এলাকার বিলে মাঠের পর মাঠ বোরো আবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে গেল কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে কিছু জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। ফলে কৃষকরা ফসল কাটতে মাঠে নেমে পড়েছেন। বৃষ্টিতে ভিজে কোন রকমে ধান কেটে রাস্তার উঁচুতে রাখা হচ্ছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান কাটার শ্রমিক মিলছে না বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকে ধান কাটছেন।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, শিবচরে চরাঞ্চল বেষ্টিত জরজানাজাত, কাঠালবাড়ী, সন্ন্যাসীরচর, মাদবরেরচর, রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম, কদমবাড়ী, পাখুল্লা, বাজিরতপুর, সদর উপজেলার কুনিয়া, দৌলতপুর, কেন্দুয়া, খাটোপাড়া কেন্দুয়া, কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল, সিড়িখান, সাহেবরামপুর, আন্ডারচর, বাঁশগাড়ি, ঠেঙ্গামারা, রমজানপুর ও ডাসার উপজেলার শশীকর, ডাসার, বালিগ্রামসহ অন্তত ৪০টি গ্রামে নিম্নাঞ্চলের ধানের জমিতে পানি উঠতে শুরু করেছে। এতে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যেতে পারে।ডাসার উপজেলার শশীকর এলাকার কৃষক হরিপদ রায় বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমাদের জমিতে পানি জমতে শুরু করেছে। কিন্তু ধান এখনও পুরোপুরি পাকে নি। আর সপ্তাহখানিক থাকলে ধানটা পরিপাক্ক হতো। কিন্তু ঝড়ের কারণে বাধ্য হচ্ছি ধান কাটতে। এতে ফলন আগের বারের মতো হবে না। আমি এবার তিন বিঘা জমিতে ধান লাগাইছি। সব জমির ধান কাটতে শুরু করেছি।’আরেক কৃষক সলেমান বেপারী বলেন, ‘ধানের গোড়ায় পানি। এখন ধান না কাটলে সব পানির নিচে যাবে। কিন্তু এই সময়ে ধানকাটা শ্রমিকও পাই না। অন্য দিনে প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এমন থাকলে ধান ঘরে তুলতে পারব না। এখন পরিবারের লোকজন আর স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতায় ধান কাইটা রাস্তায় উঠাচ্ছি। আর রোদ না উঠলে ধানও পচতে শুরু করবে। এখন আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি।’মাদারীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘এবার ধান পাকা মৌসুমে বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকরা কিছুটা বিপাকে পড়েছে। তার কারণে কৃষকদের আগেভাগে নিম্নাঞ্চলের ধান কাটার আহ্বান জানিয়েছি। জেলার ৬০টি ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিনে গিয়ে কৃষকদের ধান কাটতে উদ্বুদ্ধ করছেন। কিছু ধান আধাপাকা হলেও ধান আগে ঘরের নেয়ার অনুরোধ করছি। ফলে কৃষকরা বড় ধরনের ক্ষতির থেকে রক্ষা পাবে।’
তিনি জানান, জেলায় এবার ৩৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। তবে হয়েছে এর চেয়ে কিছু কম জমিতে। এরই মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। বাকি ৭৪ শতাংশ জমির ধান কাটা হবে।