নাটোরের সিংড়ায় পাশের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়ির ধাক্কায় সাংবাদিক নিহতের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো মামলা হয়নি।
নিহত সাংবাদিক সোহেল রানার মা আলেয়া বেগম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় তারা কোনো মামলা করবেন না।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মামলা করব না। মামলা করে তো আর সন্তানকে ফিরে পাব না। এখন একটাই চাওয়া, সোহেলের দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে প্রশাসন যেন তার স্ত্রীর একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়।’
সিংড়া উপজেলার নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন তেলের পাম্প এলাকায় সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নলডাঙ্গার ইউএনও সুখময় সরকারের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন সোহেল।
৩৪ বছর বয়সী সোহেলের বাড়ি সিংড়া পৌর শহরের বালুয়া বাসুয়া মহল্লায়। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত স্থানীয় দৈনিক দুরন্ত সংবাদের সিংড়া উপজেলা প্রতিনিধি ছিলেন। পাশাপাশি আগপাড়া শেরকোল বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী শিক্ষকও ছিলেন।
ইউএনওর গাড়ির ধাক্কায় নিহত সাংবাদিক সোহেল রানা
স্থানীয়রা জানান, ইউএনওর স্ত্রী মানসী দত্ত মৌমিতা সিংড়ার গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক। তাকে সাড়ে ৯টায় কলেজে নামিয়ে গাড়ি ফিরে যাচ্ছিল। আর সোহেল যাচ্ছিলেন শেরকোল বন্দর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে।
নিংগইন পাম্পের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, সোহেল তার মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তা পার হয়ে পাম্পের দিকে আসছিলেন। সে সময় ইউএনওর গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। সোহেল ছিটকে কিছু দূরে রাস্তার পাশে পড়েন। ইউএনওর গাড়ি থেকে তিনজন নেমে আসেন।
সিসিটিভি ফুটেজে ইউএনওর গাড়ি সোহেলকে ধাক্কা দেয়ার ঠিক আগের ছবি
ইউএনওর গাড়ি থেকে বোরকা পরা একজন নারী ও দুজন পুরুষকে নামতে দেখেছেন বলে জানান স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী সোলায়মান হোসেনও। দুর্ঘটনার পরই তাদের পালিয়ে যেতে দেখেন।
স্থানীয়রা গুরুতর আহত সোহেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ইউএনও সুখময় দাবি করেন, তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি স্ত্রীকে কর্মস্থলে পৌঁছে দিতে নয়, পেট্রল নিতে সিংড়া যাচ্ছিল।
তিনি বলেন, ‘নলডাঙ্গা ছোট উপজেলা। সেখানে পেট্রল সংকটের কারণে সিংড়ায় পেট্রল নিতে পাঠিয়েছিলাম।’
তবে নলডাঙ্গার পেট্রল পাম্পে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেখানে সেদিন সারা দিনই পেট্রল বিক্রি হয়েছে।
গাড়ির ছবি দেখে মৌমিতার কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তিনি এই গাড়িতেই নিয়মিত কলেজে আসেন। সোমবারও এতেই এসেছিলেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন বলেন, ‘কলেজে বিভিন্নজন গাড়ি নিয়ে আসেন। কোনটা ইউএনওর বা কোনটা সরকারি গাড়ি তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
এই ঘটনায় মৌমিতার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তে সোমবার রাত ১০টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ সোহেলের বাড়িতে যান।
তিনি বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে। সোহেলের স্ত্রীকে মাস্টার রোলে চাকরি দেয়া যায় কি না সে বিষয়টিও ভেবে দেখা হবে। জেলা প্রশাসন তাদের পাশে আছে। এ ছাড়া নলডাঙ্গার ইউএনওর সরকারি গাড়ি কী কারণে সিংড়া গিয়েছিল সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ঝলমলিয়া হাইওয়ে থানার পরিদর্শক রেজওয়ানুল ইসলাম জানান, সরকারি গাড়িটি জেলা প্রশাসনের হেফাজতে আছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে জানাজা শেষে সোহেলকে দাফন করা হয়েছে।