রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্নাকে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মন্ত্রী।
চিঠিটি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাতে পান সৈয়দা রত্না। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘চিঠি পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। সবার সমর্থনে আমাদের আন্দোলন সফল হতে যাচ্ছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিশিয়াল প্যাডে পাঠানো চিঠিতে মন্ত্রী লেখেন, ‘সালাম নেবেন। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠটি এই ওয়ার্ডে বসবাসরত তিন লাখ মানুষের একমাত্র উন্মুক্ত স্থান এবং খেলার মাঠ হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত।’
চিঠিতে মাঠের অভাবে শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে এবং তারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
তিনি লেখেন, ‘এই মাঠ রক্ষার ক্ষেত্রে আপনার উদ্যোগের কথা পত্রিকায় পড়তে গিয়ে আমার শৈশব ও কৈশোরকালের কথা মনে পড়ে যায়। সেই সময়ে সিলেট অঞ্চলে অনেক খেলার মাঠ এবং বড় বড় পুকুর বা দীঘি ছিল, যেখানে আমাদের শৈশবকাল অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে অতিবাহিত হয়েছে।
‘বর্তমানে জলাশয়গুলো ভরাট করে অট্টালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং খেলার মাঠগুলোতে বিভিন্ন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যার ফলে এলাকার যুবসমাজ এবং কিশোর-কিশোরীরা খেলার মাঠের অভাবে তাদের স্বাভাবিক বিকাশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মাদকদ্রব্য সেবনসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।’
চিঠির শেষাংশে মন্ত্রী লেখেন, ‘দেশের প্রত্যেক শহরে উন্মুক্ত মাঠ ও পুকুর বা জলাশয় থাকা একান্ত প্রয়োজন এবং আরও বেশি প্রয়োজন যে সমস্ত এলাকা ভূমিকম্পপ্রবণ (সেগুলোতে)।’
সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর কাছ থেকে ধন্যবাদপত্র পেয়ে উচ্ছ্বসিত সৈয়দা রত্না নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্তাব্যক্তির কাছ থেকে ধন্যবাদ চিঠি আসা মানে অনেক কিছু। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই মাঠটাকে রক্ষা করতে চাই।’
প্রেক্ষাপট
রাজধানীর কলাবাগানে পরিত্যক্ত তেঁতুলতলা মাঠটি বরাদ্দ পেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেয় পুলিশ। কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণ হবে বলে টানানো হয় সাইনবোর্ড। এরপর থেকেই শুরু হয় তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলন।
গত ২৪ এপ্রিল সকালে মাঠ রক্ষার আন্দোলনে থাকা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে পুলিশ। প্রায় ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মা ও ছেলে।
রত্না ও তার ছেলেকে আটক করার পর মাঠ রক্ষার আন্দোলন আরও জোরদার হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি অধিকারকর্মীরা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হন।
দফায় দফায় সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন।
সচিবালয়ে ২৭ এপ্রিল অধিকারকর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
পরদিন ২৮ এপ্রিল দুপুরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সেখানে আপাতত থানা করতে নিষেধ করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আসার পর আনন্দে মেতে ওঠে শিশু-কিশোর, স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকারকর্মীরা। ২৮ এপ্রিল রাতেই মাঠ থেকে পুলিশি পাহারা উঠিয়ে নেয়া হয়।
মাঠের প্রান্তে সীমানাপ্রাচীর করা হলেও ভেতরে যাওয়ার জন্য এক পাশ খোলা রয়েছে। মাঠটি খেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে শিশু-কিশোররা। ঈদের জামাতও হয়েছে সেখানে।