বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সম্প্রীতি হারানো গ্রামে দাঁড়িয়ে এক মসজিদ

  •    
  • ১১ মে, ২০২২ ০৮:০৮

বর্তমানে কাঁটাতারে বিভক্ত চান্দাপাড়া গ্রামটির ভারতের অংশে কিছু জনবসতি থাকলেও, বাংলাদেশের অংশটি একেবারেই জনশূন্য। সবুজ প্রকৃতির সুনসান নীরবতাকে মোহাবিষ্ট করে তোলে শুধু সীমান্তের এপার-ওপারে উড়ে চলা পাখিদের কলকাকলি।

ভারতের সীমান্তঘেঁষা পঞ্চগড়ের চান্দাপাড়া গ্রামটি এখন শুধুই স্মৃতি। মুক্তিযুদ্ধের সময় দুই দেশের মানুষের জন্যে হাট বসত এখানে। নাম ছিল জয়বাংলা হাট।

সম্প্রীতির বন্ধনে দুই বাংলার মানুষই এই গ্রামে সুখ-দুঃখ ভাগ করে বসবাস করছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চুরি-ডাকাতি, খুন-খারাবি বেড়ে যায় ওই এলাকাটিতে। নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে পুরো গ্রাম।

জানা যায়, গ্রামের পাশেই ছিল ভারতীয় চা বাগান। তাই গ্রামটিতে ভারতীয় চোর-ডাকাতের উৎপাতই ছিল বেশি। ওই এলাকা থেকে দিনের বেলায়ও গরু, ছাগল ধরে নিয়ে যেত তারা।

তাই চান্দাপাড়ার গ্রামের মানুষজন ধীরে ধীরে আশপাশের গ্রামগুলোতে জমি কিনে বাড়ি করা শুরু করে। এখন আর কেউ নেই সেই গ্রামে!

গ্রামটিতে একসময় বাস করতেন ৯২ বছর বয়সী আফাজউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামের নাম এখন শুধু কাগজে-কলমে। এখানে আর কেউ থাকে না এখন।’

সরেজমিনে সম্প্রীতির সেই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল একটা এলাকাজুড়ে শুধু বাঁশঝাড়। আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফলদ ও বনজবৃক্ষ। গাছে গাছে ঝুলে আছে আম, কাঁঠাল ও নারিকেল। কয়েকটি শুকনা পুকুরও দেখা গেছে। গ্রামের পাশেই বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। মাঝখান দিয়ে চলে গেছে একটি কাঁচা রাস্তা। গ্রামের অন্যপাশে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বড় কয়েকটি চা বাগানও দেখা গেছে।

বর্তমানে কাঁটাতারে বিভক্ত চান্দাপাড়া গ্রামটির ভারতের অংশে কিছু জনবসতি থাকলেও বাংলাদেশের অংশটি একেবারেই জনশূন্য। সবুজ প্রকৃতির সুনসান নীরবতাকে মোহাবিষ্ট করে তোলে সীমান্তের এপার-ওপারে উড়ে চলা পাখিদের কলকাকলি।

জনবসতির সব চিহ্ন মুছে গেলেও শত বছরের পুরোনো একটি মসজিদ এখনও চোখে পড়ে চান্দাপাড়া গ্রামে। তবে এই মসজিদে এখন আর কেউই নামাজ পড়েন না। ভেতরে আস্তানা গেঁড়েছে বাদুড়সহ কিছু জংলি পাখি।

জনবসতিহীন এই গ্রামটি পঞ্চগড় সদর উপজেলার গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। দুই দশক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই গ্রামটির গোড়াপত্তনের ইতিহাস। কেউ জানাতে পারেননি। তবে দেশ ভাগের আগে ভারত-বাংলাদেশের বিরাট এলাকাজুড়ে চান্দাপাড়া গ্রামের বিস্তৃতির কথা শোনা যায়।

স্থানীয়রা জানান, চান্দাপাড়া একটি ঐতিহাসিক গ্রাম। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানে ভারত-বাংলাদেশের জয়বাংলা হাট বসত। দুই দেশের নাগরিকরা এই হাটেই কেনাবেচা করত।

গরিনাবাড়ী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘গত দুই দশক আগেও গ্রামটিতে বংশপরম্পরায় কৃষক, ব্যবসায়ী, শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন পেশার প্রায় শতাধিক পরিবার বাস করত। বিভিন্ন উৎসবে হতো নানা আয়োজন। গ্রামের সবাই মুসলিম হওয়ায় ঠিক মাঝামাঝি এলাকায় নির্মাণ করা হয় চান্দাপাড়া জামে মসজিদ।’

স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, আশপাশের কয়েক গ্রামের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম আধাপাকা মসজিদ। প্রাত্যহিক নামাজের পাশাপাশি ধর্মীয় পাঠশালা হিসেবেও প্রসিদ্ধ ছিল এটি। দেশ ভাগ হলে এই এলাকার অনেকেই সীমান্তের ওপারে বসতি গড়ে। এলাকার বয়স্ক অনেক মানুষ এখনও স্বজনদের খোঁজখবর নিতে সীমানা রেখায় গিয়ে অপেক্ষা করে।

গরিনাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনোয়ার হোসেন দিপু বলেন, ‘গ্রামটিতে ধর্মপ্রাণ একটি মুসলিম জনগোষ্ঠী শত বছর ধরে বাস করেছে। শত বছরের পুরোনো মসজিদটি সেই গ্রামের স্মৃতি ধরে রেখেছে।’

চেয়ারম্যান দাবি করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সরকার সীমান্ত হাটের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কর্মসূচিতে চান্দাপাড়ার জয়বাংলা হাটটিকে আবারও চালু করা হলে ঐতিহ্য ফিরে আসার পাশাপাশি দুই দেশের মানুষ তাদের পুরোনো স্মৃতি ফিরে পাবে। সীমান্তে আবারও বাড়বে সৌহার্দ্য সম্প্রীতি।

এ বিভাগের আরো খবর