জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সরকার যে ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি সেটি বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রমাণ হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ীদেরকে বিশ্বাস করে ভুল করেছেন বলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা এই মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে দলের কো- চেয়ারম্যানদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী এক সভায় বক্তব্য রাখছিলেন জি এম কাদের।
তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রীর বক্তব্যে মনে হচ্ছে সরকার যেনো ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। সাধারণ মানুষের জন্য সরকারের কোনো দরদ নেই।’
ঈদের আগে থেকে বাজার থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়ে আগে দিন সচিবালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করেছিলাম। এটাই আমাদের ব্যর্থতা।’
গত মার্চ সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব সরকার ফিরিয়ে দেয়ার পর বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঈদুল ফিতরের আগে বাজার থেকে একেবারে উধাও হয়ে যায় তেল।
ঈদের ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে বোতলজাত তেলের দাম লিটারে ৩৮ টাকা আর খোলা তেলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানোর পরও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এখনও সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে জেলায় জেলায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি জেলাতেই হাজার হাজার বোতল তেল মজুত করে রাখার প্রমাণ পেয়ে ব্যবসায়ীদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে।
ঈদের পর তেলের দাম সমন্বয় করা হবে- এই বার্তা পেয়ে বেশি দরে বিক্রি করার জন্য এসব তেল বিক্রি না করে জমিয়ে রেখেছিলেন ব্যবসায়ীরা। বোতলের গায়ে তেলের দাম লিটারে ১৬০ টাকা লেখা থাকলেও ক্রেতাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে নতুন দাম ১৯৮ টাকা।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তো দেখছি রোজার ভেতর একবার দাম বৃদ্ধি করাই ভালো ছিল। মিল মালিকরা মেনে নিলেও খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা ঠিকই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ঈদের পরে তেলের দাম বাড়বে, এটা সবাই অনুমান করতে পারছিলেন।’
জি এম কাদের বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে, ব্যাবসায়ীদের কারসাজিতে সয়াবিন তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই সরকার বুঝে না বুঝে সমর্থন দিচ্ছে।
‘মন্ত্রীর বক্তব্যে মনে হচ্ছে সরকার যেনো ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। গেল সপ্তাহে বাজারে সয়াবিন তেল ছিল না। কিন্তু এখন বিভিন্ন গুদাম থেকে শত শত বোতল তেল উদ্ধার হচ্ছে।’
সরকার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে বলেও মনে করেন জি এম কাদের। বলেন, ‘মানুষ সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনে স্বস্তি নেই, শান্তি নেই। সাধারণ মানুষ এমন অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চায়।’
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকেই কাজ হারিয়েছে, আবার প্রতিদিন বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। তার ওপর প্রতিদিন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষ অবর্নণীয় কষ্টে আছে, দেখার যেনো কেউ নেই।’
দেশের মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতার কথা বিবেচনা করে রেশনিং সিস্টেম চালু করতেও সরকারের প্রতি দাবি জানান জি এম কাদের। বলেন, সরকার টিসিবির মাধ্যমে কম দামে পণ্য দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারবে না।
জাতীয় পার্টি মহাসচিব মজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সালমা ইসলামও এ সময় বক্তব্য রাখেন।
এর আগে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জিএম কাদেরের সঙ্গে দলের অতিরিক্ত মহাসচিবদের সাথে এক সভা হয়। মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর পরিচালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত মহাসচিব সাহিদুর রহমান টেপা, শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, ফকরুল ইমাম, রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া ও লিয়াকত হোসেন খোকা ।