দেশের জ্বালানি তেল পরিশোধন, মজুত ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) আধুনিকায়নে প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৫ সালে। দু’দফা সময় এবং ব্যয় বাড়িয়েও শেষ হয়নি দেশের একমাত্র তেল শোধনাগারটির উন্নয়ন। এবার আরেক দফা সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এই প্রকল্পের।
‘ইনস্টলেশন অফ সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পটির তৃতীয় সংশোধনী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একনেকের এই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন।
নতুন করে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি অনুমোদনের ফলে তিন বছর মেয়াদি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে লাগবে আট বছর। একইসঙ্গে ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকার ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। মূল ব্যয় থেকে তৃতীয় সংশোধনী পর্যন্ত বাড়তি ব্যয় হবে ২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা।
একনেক-পরবর্তী সংবাদ সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশে তেল শোধনের সক্ষমতা আরো বাড়বে।’
বিশ্ববাজারে তেলের দামে অস্বাভাবিক অস্থিরতার কারণে দেশে মজুত সক্ষমতা ও পরিশোধনের ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি বলে মনে করছে সরকার। মজুত বৃদ্ধির মাধ্যমে সব ধরনের জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্য রয়েছে এই প্রকল্পে।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। পাশাপাশি পরিশোধিত তেল মজুত ও সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে।
পরিকল্পনা কমিশন বলছে, ২০১৫ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই বছরই প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এর মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়। ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২২ সাল পর্যন্ত এবং ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৬ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। এবার তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিশোধন ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও অপরিশোধিত তেল কারখানায় আনার জন্য পাইপলাইনসহ অন্যান্য কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এ প্রকল্পে। প্রকল্পে জার্মানভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইএলএফ কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্সের সঙ্গে সম্পাদিত মূল চুক্তির অতিরিক্ত কাজ সংযোজন করতে হচ্ছে। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা কমে যাওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কুতুবদিয়া চ্যানেল ও মাতারবাড়ীতে ১৪৬ কিলোমিটার অফশোর এবং ৭৪ কিলোমিটার অনশোর পাইপলাইন নির্মাণ হবে। মহেশখালীতে ৬০ হাজার ঘনমিটার ক্ষমতার তিনটি অপরিশোধিত তেল সংরক্ষণাগার এবং ৩৬ হাজার ঘনমিটার সম্পন্ন তিনটি ডিজেল স্টোরেজ ফার্ম নির্মাণ করা হবে।
এ প্রকল্পের জন্য ৪ হাজার ৭৮৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চায়না এক্সিম ব্যাংক।
মঙ্গলবারের একনেক সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- ৩৩/১১ কেভি পোল মাউন্টেড উপকেন্দ্রের নবায়ন ও আধুনিকায়ন প্রকল্প, ব্যয়বরাদ্দ ৬৭৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা; নেসকো এলাকায় স্মার্ট ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বাস্তবায়ন প্রকল্প, ব্যয় ২৪১ কোটি টাকা; লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (এলওজিআইসি) প্রকল্প, ব্যয় ৩০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা; যশোরে শেখ জহুরুল হক পল্লী উন্নয়ন একাডেমি প্রতিষ্ঠাকরণ প্রকল্প, ব্যয় ১৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
আরো অনুমোদন পেয়েছে মিঠামইন উপজেলার ঘোড়াউতরা, বোলাই-শ্রীগাং নদীর অংশবিশেষ ও ইটনা উপজেলার ধনু নদী, নামাকুড়া নদী ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর অংশবিশেষের নাব্যতা উন্নয়ন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্প, ব্যয় ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা; আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর অস্ত্রাগার (প্রথম পর্যায়ে ৪০টি) নির্মাণ প্রকল্প, ব্যয় ৬৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা; দিনাজপুর সড়ক বিভাগাধীন হিলি (স্থলবন্দর)-ডুগডুগি-ঘোড়াঘাট জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মানে উন্নীতকরণসহ ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বিদ্যমান সরু/জরাজীর্ণ কালভার্টগুলো পুনঃনির্মাণ এবং বাজার অংশে রিজিড পেভমেন্ট ও ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প; ব্যয় ৪৬৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা।
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলো- শেরপুর (কানাসাখোলা)-ভীমগঞ্জ-নারায়ণখোলা-রামভদ্রপুর-পরানগঞ্জ-ময়মনসিংহ (রহমতপুর) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ১ হাজার ৮৪২ কোটি ২৭ লাখ টাকা; শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১৪টি) প্রকল্প, ব্যয় ১ হাজার ১১৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা; একশ’ উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ স্থাপন প্রকল্প, ব্যয় ২ হাজার ৫২০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।