বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জুতার আকৃতিতে জাদুঘর

  • সাবিহা ইশরাত জাহান স্টেলা, মেরিল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র   
  • ১০ মে, ২০২২ ১৮:৪৩

দালানটির সম্মুখভাগ ছাড়া বাকি পুরোটাই জাদুঘর। প্রতিটি তলাতেই আছে বিশেষভাবে সাজানো কক্ষ। সেসব কক্ষ ঘুরতে ঘুরতেই পাওয়া যাবে অদ্ভুত সুন্দর আর মজার এই দালানসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পেনসিলভেনিয়া রাজ্যের অদ্ভুত সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ বা ভূদৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছেন ইয়র্ক কাউন্টির রাস্তা ধরে। হঠাৎই চোখে পড়ল বিশালাকায় এক জুতা। একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছেন আর অবাক হচ্ছেন জুতাটির বিশালতায়।

একদম কাছে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, যেনতেন কোনো ভাস্কর্য নয়, এটি জুতার আদলে নির্মিত আস্ত একটি পাঁচতলা বাড়ি। ভেতরে জাদুঘর ও রেস্তোরাঁ। যেখানকার আইসক্রিম আবার সুপরিচিত।

কিন্তু এই আকৃতির দালান নির্মাণের নেপথ্য কারণ কী? কেনইবা পরে জাদুঘরে পরিণত করা হয় জুতা বাড়িটিকে?

‘দ্য হাইন্স সু হাউস’-এ কর্মরত, একাধারে কিউরেটর ও রেস্তোরাঁকর্মীদের তথ্য বলছে, দালানটির সম্মুখভাগ ছাড়া বাকি পুরোটাই জাদুঘর। প্রতিটি তলাতেই আছে বিশেষভাবে সাজানো কক্ষ। সেসব কক্ষ ঘুরতে ঘুরতেই পাওয়া যাবে অদ্ভুত সুন্দর আর মজার এই দালানসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য।

কর্নেল ম্যালন এন হাইন্সের জন্ম ওহাইও রাজ্যের ওল্ড ওয়াশিংটনে। জাত ব্যবসায়ী হাইন্সের ছিল জুতার কারবার। বয়স যখন ৩০, তখন অর্থাৎ সেই ১৯০৫ সালে তিনি চলে আসেন পেনসিলভেনিয়ার ইয়র্কে। খবর পেয়েছিলেন এখানে জুতার ব্যবসায় পসার ভালো হবে। সঙ্গে ছিল ১২৭ ডলারের জুতার চালান।

দিনে দিনে তার ব্যবসা এতই বেড়ে যায় যে পেনসিলভেনিয়া ও মেরিল্যান্ডজুড়ে ৪০টির বেশি দোকান খুলে ফেলেন তিনি। নিজে পরিণত হন লাখপতি ব্যবসায়ীতে। আর কর্মসংস্থান হয় বহু মানুষের।

কীভাবে অল্প দিনে এত পরিচিতি পেলেন এবং পরিণত হলেন 'সু উইজার্ড' বা 'জুতার জাদুকরে’?

হাইন্সের মাথায় ছিল বিজ্ঞাপনের আজব আর নাটকীয় সব বুদ্ধি, যার প্রতিফলনই হলো এই সু হাউস। জুতার বিজ্ঞাপনের এর চাইতে অভিনব কৌশল আর কী-ইবা হতে পারে?

জুতা বাড়ি বানানোর কাজ শুরু হয় ১৯৪৮ সালে। বাড়িটির মোট উচ্চতা ২৫ ফুট। চওড়ায় বাইরে থেকে ৪৮ ফুট আর ভেতরে ১৭। মোট ১৫০০ বর্গফুটের বাড়িটিতে রয়েছে তিনটি ঘর, দুটি বাথরুম, একটি বসার ঘর এবং একটি রান্নাঘর।

১৯৪৯ সালে বাড়িটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পরই এটিকে সিনিয়র সিটিজেন বা বয়স্ক দম্পতিদের জন্য ভাড়া দেয়া শুরু করেন হাইন্স।

ভাড়া দেয়া হতো সেখানে মধুচন্দ্রিমা করতে ইচ্ছুক দম্পতিদেরও। থাকত সপ্তাহান্তে একটি দিন বিনা মূল্যে থাকার লোভনীয় অফার। সঙ্গে নিজের জুতার ব্র্যান্ডের প্রচারও হয়ে যেত।

হাইন্স সাহেব কিন্তু কখনই থাকেননি এই বাড়িতে। রাস্তার ওপারেই ছিল তার নিজের বাড়ি। ১৯৬২ সালে তার মৃত্যুর পর বাড়িটি তারই শর্ত মতে দেয়া হয় সেখানকার কর্মচারীদের। একপর্যায়ে তারা বাড়িটি ভাড়া দেন এক দন্ত চিকিৎসককে। পর্যায়ক্রমে জুতা বাড়ি পরিণত হয় আইসক্রিম পারলারে।

এটিকে পাকাপাকিভাবে পরিণত করা হয় আজকের হাইন্স সু হাউসে। এটিকে জাদুঘরে পরিণত করার পেছনে অবদান রয়েছে মেলানি শুমাকের। যিনি এটির মালিক ছিলেন ২০১৫ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত। এটির প্রতিটি ঘর সাজাতে তিনি সেই পঞ্চাশের দশকের আসবাব ব্যবহার করেছেন। সঙ্গে রেখেছেন জুতা তৈরিতে হাইন্সের কারখানায় ও তৎকালীন ব্যবহৃত সরঞ্জামগুলো। সংরক্ষিত আছে ম্যালন হাইন্সের নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র। ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে তখনকার সময়ে জুতার বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হাতপাখা আদলের ইশতেহার ও জুতার চালানপত্রও।

সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বেশ কিছু তৈজসপত্র যেমন লবণ বা মরিচদানিগুলোর আদলও জুতার আকারেই। আছে সেই আমলের ডাকবাক্সটিও।

সেই আমলের দালান হলে কী হবে, যুক্তরাষ্ট্রের অগ্নিনির্বাপন নীতিমালা অনুযায়ী হাউসের পেছনে এখনও রয়েছে আদ্যিকালের ফায়ার এক্সিটটিও। রাখা আছে হাইন্স সাহেবের কুকুরের ঘরটি। বেড়াগুলোতেও রয়েছে জুতার নকশা।

রাখা আছে ৭৪ বছর আগের বেশ কিছু জুতাও। যেমন, মেয়েদের লোফার ঘরানার একজোড়া জুতা যেটি তখন বিকোত ৪৮ সেন্ট মূল্যে, বাংলাদেশি মুদ্রায় বর্তমান দরে হয় ৪১ টাকা ৭৬ পয়সা।

হাইন্সের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পেনসিলভেনিয়ার ইয়র্ক কাউন্টির হ্যালেম শহরতলির ওই সড়কটির নাম রাখা হয়েছে ‘সু হাউস রোড’। সড়ক ধরে ঢোকার সময় থেকেই আশপাশে তাকালেই চোখে পড়বে জাদুঘরের প্রভাব। এমনকি সেই চত্বরে দাঁড়িয়ে রবিঠাকুরের জুতা আবিষ্কার কবিতার দুটো লাইন আবৃত্তির ইচ্ছেও জাগতে পারে বটে।

‘নিজের দুটি চরণ ঢাকো, তবে

ধরণী আর ঢাকিতে নাহি হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর