প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট কীভাবে নেয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত তারা নেবেন। অন্য কেউ ইচ্ছার কথা জানাতে পারবেন। তবে সিদ্ধান্ত তাদের।
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় যে মন্তব্য করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা জানান।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আওয়ামী লীগ প্রধান দলীয় নেতাদের এই কথা জানান বলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন এসেছে।
মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনে ২০২২ উপলক্ষে তথ্য সংগ্রহকারী ও সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘অনেকেই অনেক ইচ্ছা ব্যক্ত করতে পারেন। ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় নাই। সিদ্ধান্ত হবে আমাদের। এই মুহূর্তে ইভিএমে ৩০০ আসনে ভোট করার সামর্থ্য নাই।’
সম্প্রতি নিউজবাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর জানিয়েছেন, তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চান। কমিশনের কাছে ভোট নেয়ার যত যন্ত্র আছে, তা দিয়ে সব আসনে ভোট করা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
বর্তমানে ইসির কাছে ১ লাখ ৫৪ হাজার ইভিএম রয়েছে। তবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বুথ থাকতে পারে আড়াই লাখের মতো।প্রতিটি বুথে গড়ে ১.৫টি করে ইভিএম থাকে। অর্থাৎ প্রতি ১০টি ইভিএমের বিপরীতে পাঁচটি থাকে ব্যাকআপ হিসেবে।
এই হিসাবে কমিশনের কাছে যে দেড় লাখ ইভিএম আছে, সেগুলো আসলে এক লাখ বুথে ব্যবহার করা যাবে। আগামী নির্বাচনে বুথ হতে পারে ২ লাখ ৪০ হাজার। সব বুথে ইভিএম ব্যবহার করতে হলে কমিশনের হাতে থাকতে হবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ইভিএম।
সাংবাদিকরা সিইসির কাছে জানতে চান, সব আসনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘ভোটগ্রহণ কীভাবে হবে, কতটা ইভিএমে হবে, কতটা ব্যালটে হবে, এই ব্যাপারটায় কোনো সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি নাই। এই ব্যাপারটা পর্যালোচনাধীন।
‘হয়তো আপনারা বলতে পারেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটা বক্তব্য দিয়েছেন। বিভিন্ন দল থেকে বক্তব্য আসতে পারে। আমি জানি না, এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন না আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেছেন; স্পষ্ট না।
‘আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বলা, বিএনপি প্রধানের বলা, জাসদের আবদুর রবের বলা- এগুলো ভিন্ন জিনিস।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবার মতামত বিবেচনা করব। আপনারা মতামত দিতে পারেন, রাজনৈতিক দলগুলো মতামত দিতে পারে। আলটিমেটলি আমরা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব ভোটগ্রহণের পদ্ধতির বিষয়ে।’
এক শ আসনে ইভিএমের নির্বাচন করার সক্ষমতা আছে বলেও জানান সিইসি।
যতদূর সম্ভব স্বাধীনভাবে ভোট পরিচালনা করবেন জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘এটি আমাদের এখতিয়ারভুক্ত। পদ্ধতিও আমাদের এখতিয়ারভুক্ত।’
ভোটার হওয়ার জন্য মানুষের উৎসাহ আছে। তাহলে মানুষ ভোট দিতে যায় না কেন- এমন প্রশ্নে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন সে বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’
এবার ১৪০ উপজেলায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করা হবে। ৭৬ হাজার প্রশিক্ষিত তথ্যসংগ্রহকারী কর্মী এই কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকবেন। ২০ মে থেকে শুরু হওয়া এই কার্যক্রম চলবে তিন সপ্তাহ।
এর বাইরেও অনলাইনে আবেদন করে ভোটার হতে পারবেন নাগরিকরা। রিভাইজিং অথরিটির কাছে আবেদন করেও ভোটার হওয়া যাবে। উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়েও ভোটার হওয়ার সুযোগ থাকছে।
বিদায়ী কে এম নুরুল হুদা কমিশন ২০২১ সালে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিলেও সেটি হয়নি। তথ্য সংগ্রহ বাড়ি বাড়ি হবে, নাকি নির্ধারিত কিছু কেন্দ্রে হবে, সেই মতপার্থক্যের কারণে ওই উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর ভোটার নিবন্ধনে ইসির মাঠপর্যায়ে নির্বাচন অফিসে গিয়ে অফলাইনে ও অনলাইনে পাওয়া আবেদন এবং ২০১৯ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহের সময়ে ১৬ বছর বয়সীদের যে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল, তাদের তথ্য দিয়েই চলতি বছরের মার্চ মাসে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। কিন্তু ২০১৯ সালের পর যারা আবেদন করেছেন, তাদের বেশির ভাগের আবেদন ঝুলে আছে।
দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০। এদের মধ্যে পুরুষ ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন আর নারী ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। ৪৫৪ জন তৃতীয় লিঙ্গের।
নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও আনিসুর রহমান।