বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে টয়লেটের পাইপ ভেঙে নবজাতক উদ্ধারের ঘটনায় কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি।
টয়লেটে ভূমিষ্ঠ হওয়া কোনো শিশু কী করে পাইপের ভেতরে গেল এবং তাকে কী করে জীবন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হলো তা জানতে তিন সদস্যের কমিটি মঙ্গলবার সকাল থেকে কাজ শুরু করেছে।
এর আগে রোববার তদন্ত কমিটি গঠন করেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তালুকদারকে সভাপতি, হাসপাতালের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে সদস্য ও সহকারী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামানকে সদস্যসচিব করে কমিটি গঠন করা হয়।’
তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আজকে থেকে কাজ শুরু করেছি। নবজাতকের বাবা-মায়ের সঙ্গে এরই মধ্যে আমাদের কথা হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তালুকদার বলেন, ‘নবজাতক ও তার মা দুজন সুস্থ রয়েছে। বাচ্চার অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৭ রয়েছে। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে।’
এর আগে ৭ মে বিকেলে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডে টয়লেটের পাইপ ভেঙে এক নবজাতককে উদ্ধার করেছেন বাবা।
নবজাতকের বাবা নেয়ামত উল্লাহ জেলে ও মা শিল্পী বেগম গৃহিণী। তাদের বাড়ি পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠির গণমান শেখপাড়া বাজার এলাকায়।
নেয়ামত উল্লাহ বলেন, ‘আমার গর্ভবতী স্ত্রী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তাকে শনিবার বরিশাল মেডিক্যালে ভর্তি করি। ডাক্তার সিজার করার পরামর্শ দেন। বিকেলে অপারেশনের জন্য ওষুধ কিনে ফিরে দেখি টয়লেটের সামনে ভিড়। আত্মীয়স্বজনরা কান্নাকাটি করছেন।
‘লোকজন জানান, আমার স্ত্রী টয়লেটেই সন্তান প্রসব করে দিয়েছে। একজন আমাকে প্যানের মধ্যে হাত দিতে বলেন। আমি পুরো হাত ঢুকিয়েও কিছু পাইনি, কিন্তু পাইপের মধ্য থেকে কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।’
ওয়ার্ডের অফিস সহায়ক জেসমিন আক্তার বলেন, ‘আমরা একজনের কাছে শুনি বাথরুমে বাচ্চা পইড়া গেছে। যাইয়া দেখি রোগী বেডে শোয়া। আমাদের এক খালা আছে, ওই খালা প্যানের ভেতরে অনেকখানি হাত ঢুকাই দেছে। প্রায় পুরা হাতই। তাও বাচ্চা পাওয়া যাইতেছে না, খালি কান্না করতাছে।
‘এরপর আমি ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে ফোন দিছি। তিনি স্যানিটারি মিস্ত্রিরে ফোন দেছেন। সে ২০ মিনিটে গাড়ি রিজার্ভ কইরা আইসা পড়ছে। সেও কান্না শুনছে। যেই বরাবর কান্না শুনছে, সেই বরাবর পাইপ ভাঙছে। তয় বাচ্চাটার বাবাই মূলত ওরে বাইর করছে।’
এর আগে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রসূতি ওয়ার্ডের ওই টয়লেটে কোনো কমোড নেই, প্যান বসানো আছে। প্যানের পাইপের মুখের ব্যাস ছয় ইঞ্চি। আর সদ্যোজাত শিশুর বাম থেকে ডান কাঁধ পর্যন্ত চওড়া প্রায় সাড়ে চার ইঞ্চি।
টয়লেটের পাইপটি তিনতলা থেকে সোজা নেমে গেছে দোতলায় শিশু ওয়ার্ডে। শিশু ওয়ার্ডের ছাদের নিচ দিয়ে পাইপটি পুবদিকের দেয়ালের দিকে গিয়ে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁক নিয়েছে। এরপর সেটি উত্তর দিকে খানিকটা এগিয়ে বামে আবার বেঁকে আরেক পাশের দেয়াল বরাবর চলে গেছে। উত্তর দিকের পাইপে পাঁচ ফুটের বেশি দূরত্বে শিশুটিকে পাওয়া যায়।